বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) চিকিৎসা সেবা আধুনিকায়ন, স্বাস্থ্যখাতের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া ও তিন দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা আবারও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে শুরু হওয়া এই অবরোধে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধ চলে টানা আড়াই ঘণ্টা, বেলা ৩টার দিকে তা তুলে নেওয়া হয়।
এই অবরোধে শত শত দূরপাল্লার বাস, ট্রাক ও যাত্রীবাহী পরিবহন আটকা পড়ে। যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছায়। মহাসড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে যানবাহনের সারি তৈরি হয়। এদিকে, মহাসড়ক অবরোধের প্রতিবাদে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনে বিক্ষোভ করেন পরিবহন শ্রমিকরা।
আন্দোলনকারীরা জানান, শেবাচিমসহ দেশের সরকারি হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ সঠিক চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না। স্বাস্থ্যখাতে সংস্কার আনা এখন সময়ের দাবি। তারা জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ বা আলোচনার প্রস্তাব না আসায় আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এই আন্দোলনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ব্রজমোহন কলেজ, সরকারি হাতেম আলী কলেজ, বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। শনিবার ছিল ধারাবাহিক আন্দোলনের ১৩তম দিন এবং মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচির তৃতীয় দিন।
অবরোধস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলেও কোনো বাধা দেননি। আন্দোলনকারীরা স্লোগানে মুখর ছিলেন।
অবরোধে আটকে পড়া যাত্রীদের কেউ কেউ জানান, চিকিৎসা ও জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় যেতে না পেরে তারা মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন। অনেক যাত্রীকে বাসের ভেতরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে।
পরিবহন শ্রমিকরা জানান, বারবার মহাসড়ক অবরোধে তারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তাদের মতে, আন্দোলন হাসপাতাল প্রাঙ্গণেই করা উচিত, যাতে সাধারণ মানুষ হয়রানি থেকে রক্ষা পান।
আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া সামাজিক আন্দোলনের নেতা মহিউদ্দিন রনি বলেন, ১২ দিন পার হলেও বরিশালবাসীর আর্তনাদ এখনো মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়নি। শেবাচিমে দুর্নীতি, অবহেলা ও ভোগান্তি চলতে থাকলে আন্দোলন আরও কঠোর হবে।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, সমস্যা সমাধানে আলোচনা চলছে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার যথাযথ প্রতিশ্রুতি ছাড়া তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন না।
শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয় থেকে হাসপাতালের চাহিদাপত্র পেয়েছেন। আজকেই (শনিবার) হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে সভা করে প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতির চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় দৃশ্যমান পরিবর্তন হবে বলেও জানান তিনি।