প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৭:৫৪
সাতক্ষীরার আশাশুনিতে বর্ষা এলেই জমে ওঠে ছাতা মেরামতের মৌসুমি ব্যবসা। বছরের অন্য সময় কাজ না থাকলেও বর্ষাকালে ব্যস্ত সময় কাটান এসব কারিগররা। বাজারের মোড়ে ফুটপাতে বসে নীরবে-নিভৃতে তারা ছাতা মেরামত করে যাচ্ছেন, যারা নিজেরা ভিজলেও মানুষকে ভেজা থেকে রক্ষা করেন।
আশাশুনি সদর, বুধহাটা, বড়দল ও দরগাহপুর বাজারে বর্ষা শুরু হওয়ার পর থেকেই ছাতা মেরামতের দোকানগুলোর সামনে ভিড় লেগে থাকে। কেউ ছিঁড়ে যাওয়া ছাতা আনছেন, কেউ আবার একসঙ্গে তিন-চারটা ছাতা নিয়ে আসছেন মেরামতের জন্য।
বুধহাটা বাজারে রাস্তার পাশে বসে থাকা ছাতার প্রবীণ কারিগর রবীনদাস জানান, তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে এই কাজ করে আসছেন। বর্ষা এলেই তার কাজের চাপ বেড়ে যায়। আগের দিনে বিভিন্ন জেলা থেকে কারিগররা এলেও এখন স্থানীয়রাই এই পেশায় যুক্ত আছেন।
তরুণ কারিগর রিয়াজুল জানান, বছরের বাকি সময়ে কাজের চাপ একেবারেই কম। কিন্তু আষাঢ়-শ্রাবণের বৃষ্টির মৌসুম এলেই হঠাৎ করে কাজের চাপ বেড়ে যায়। একেক দিন ১০-১৫টি ছাতা মেরামত করতে হয়। এই সময়টাতেই তাদের আয় কিছুটা বাড়ে।
তবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকলেও এখনো তারা নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় বসে কাজ করার সুযোগ পাননি। ফুটপাতে বসে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় বাধার সম্মুখীন হতে হয়। বাজার কমিটি কিংবা পুলিশ মাঝে মাঝে তাদের উঠে যেতে বলেন। এতে তারা দারুণ অসুবিধায় পড়েন।
বড়দল বাজারের রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা গরিব মানুষ, এই ছাতা মেরামতের কাজ করেই সংসার চলে। ফুটপাতে বসে কাজ করতে হলেও কেউ জায়গা দিতে চায় না। আমরা চাই উপজেলা প্রশাসন বা ইউনিয়ন পরিষদ আমাদের একটি নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ দিক।
এই দাবিটি শুধু রফিকুল বা রবীনদাসের নয়, আশাশুনির প্রতিটি ছাতা কারিগরের। যারা বর্ষাকালে সাধারণ মানুষের জন্য দরকারি একটি পণ্যের ব্যবহারযোগ্যতা নিশ্চিত করেন, তাদের জন্য প্রয়োজন নিরাপদ ও নির্দিষ্ট একটি কর্মস্থল।
জলবায়ু পরিবর্তনে যখন বর্ষা নতুন চেহারা নিয়ে ফিরে এসেছে, তখন ছাতার গুরুত্ব বেড়েছে বহুগুণে। আর সেই ছাতা ঠিক রাখার পেছনে যাঁরা নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের জন্যও চাই ন্যায্য সম্মান ও সরকারি স্বীকৃতি।