বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপের প্রভাবে গত কয়েক দিন ধরে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। এর সঙ্গে অমাবস্যার জোয়ারে পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যাওয়ায় কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। দ্বীপের একাধিক অংশে পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে, তলিয়ে গেছে গাছপালা, স্থাপনা এবং কৃষিজমি। এতে করে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে হাজারো দ্বীপবাসী।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম জানান, গত তিন দিন ধরে সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে সেন্টমার্টিনের উত্তরাংশ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভেঙে গেছে সৈকতের বালিয়াড়ি, ধসে পড়ছে সীমানা নির্ধারণে স্থাপিত প্রাচীর। উত্তর পাড়া, গলাচিপা ও পূর্বপাড়া এলাকায় বসতবাড়ি ও গাছপালা তলিয়ে গেছে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “এভাবে ভাঙতে থাকলে সেন্টমার্টিন এক সময় বঙ্গোপসাগরের গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এখনই জিও ব্যাগ বা ব্লক ফেলার মাধ্যমে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
অন্যদিকে শাহপরীর দ্বীপেও একই ধরনের দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। বেড়িবাঁধ উপচে সেখানকার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তত ৩০ হাজার মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ঘোলারচর, মিস্ত্রিপাড়া, জালিয়াপাড়া, বাজারপাড়া, পশ্চিমপাড়া, ডাঙ্গরপাড়া, দক্ষিণপাড়াসহ একাধিক গ্রাম।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দ্বীপ যখন ধ্বংসের পথে, তখন পরিবেশবাদীরা কোথায়? শুধু কথার ফুলঝুরি না দিয়ে সেন্টমার্টিন রক্ষায় এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।”
ভাঙনের পাশাপাশি টানা বৃষ্টিপাত ও বৈরি আবহাওয়ার কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে গত ৪-৫ দিন ধরে সব ধরনের সার্ভিস বোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে দ্বীপবাসীর যাতায়াত ও মালামাল পরিবহন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড টেকনাফ শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, “বেড়িবাঁধ উপচে পানি ঢোকার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিবছরই এমন ভাঙনের মুখে পড়ে দ্বীপের মানুষ বিপাকে পড়ছে। এখনই স্থায়ী সমাধান না হলে সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ অচিরেই বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে। তারা সরকারের প্রতি দ্রুত ভাঙন রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।