সারা দেশে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, বিশেষ করে সিলেটসহ কয়েকটি জেলায় এডিস মশার উপস্থিতি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনও ডেঙ্গুর প্রকৃত প্রকোপ শুরু হয়নি, কেবলমাত্র প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় ২০২৫ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আগেভাগেই বাড়ছে, যা রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে দেশে ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছিলেন সর্বোচ্চ ১,৭০৫ জন, এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩,২১,১৭৯ জন। চলতি বছর ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪৪ জন, আর আক্রান্ত হয়েছেন ৩,৬৫১ জন। অথচ ২০২৪ সালের জুন শেষে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক লাখের বেশি এবং মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জনের।
আইইডিসিআরের জরিপ অনুযায়ী, এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব মাপার সূচক ব্রুটো ইনডেক্সের মাধ্যমে জানা গেছে—যেসব এলাকায় সূচক ২০ শতাংশের বেশি, সেসব এলাকা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অন্তত ১৩টি ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স সেই সীমা অতিক্রম করেছে। দক্ষিণ সিটির ৭টি ও উত্তর সিটির ৬টি ওয়ার্ড ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
মশার প্রজননের প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সিমেন্টের পানির ট্যাঙ্ক (২২%), এরপর রয়েছে মেঝেতে জমে থাকা পানি (২০%), প্লাস্টিকের ড্রাম, ওয়াটার মিটার চেম্বার, প্লাস্টিকের বালতি, ফুলের টব, প্লাস্টিক পাইপ, পরিত্যক্ত টায়ার, এবং সিমেন্ট প্লট। বহুতল ভবনগুলোতে সবচেয়ে বেশি (৫৮.৮৮%) লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
ঢাকার বাইরের জেলাগুলোর মধ্যে ঝিনাইদহ, মাগুরা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও সিলেটেও এডিস মশার ঘনত্ব আশঙ্কাজনক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসচেতনতা ও সরকারি পদক্ষেপ না থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
তাই এখনই প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, মশা নিধন কার্যক্রম জোরদার এবং জনসচেতনতামূলক প্রচারণা। নইলে আগের বছরের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে বাংলাদেশ।