প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ১৮:৪
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বরমচাল চা বাগানের একটি সাধারণ ঘর থেকে উঠে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বিত শিক্ষার্থী হওয়ার স্বপ্নপূরণ করেছেন চা শ্রমিক পরিবারের সন্তান ইতি গৌড়। দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, অভাব আর প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে তিনি বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে ইতিহাস গড়েছেন। বরমচাল এলাকার প্রথম কোনো শিক্ষার্থী হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়ায় গোটা চা বাগান এলাকায় বইছে আনন্দের জোয়ার।
ইতির শিক্ষা জীবন শুরু হয় বরমচাল মিশনারি স্কুল থেকে। পরবর্তীতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় যথাক্রমে ৪.৬৭ এবং ৪.৮৩ জিপিএ অর্জনের পর তিনি দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। শুরুতে জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথে হতাশা এলেও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়ে ভর্তি হন। তবে ঢাবিতে সুযোগ পাওয়ার পর তা ছেড়ে দেন এবং স্বপ্নপূরণের পথে পা বাড়ান।
ইতির এই অর্জনের পেছনে রয়েছে ত্যাগের অসাধারণ গল্প। তার মা সুমিত্রা গৌড় চা শ্রমিক ছিলেন, যিনি দুই বছর আগে মারা যান। বাবা শংকর গৌড় বাপেক্সের প্রাক্তন নিরাপত্তা প্রহরী, যিনি ২০১৮ সালে অসুস্থ হয়ে চাকরি হারান। বর্তমানে তিনি কর্মক্ষম নন। এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই ইতি নিজের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং এগিয়ে গেছেন।
ভবিষ্যতে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিএ) হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন ইতি। তিনি মনে করেন, কঠোর পরিশ্রম ও ভালো ফলাফলের মাধ্যমে সেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। মেয়ের সাফল্যে আবেগাপ্লুত বাবা শংকর বলেন, “আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেখতাম, ভাবতাম আমাদের মেয়েও যদি এমন হতো! আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।”
ইতির অর্জনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই বরমচাল চা বাগানে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই তাকে আর্থিক ও মানসিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। চা বাগানভিত্তিক শিক্ষার্থী সংগঠনগুলো ইতিকে অনুপ্রেরণার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করছে।
রবিবার দুপুরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ইতি গৌড়কে সংবর্ধনা ও আর্থিক পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “ইতির সাফল্য শুধু একটি পরিবারের নয়, একটি সম্প্রদায়ের প্রেরণা।” ইতির জন্য এই সম্মাননা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিবাচক বার্তা বহন করে এবং ভবিষ্যতের পথচলায় তার মনোবলকে আরও দৃঢ় করে।