প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ১৭:১৭
ঝালকাঠি সদর উপজেলার পূর্ব গুয়াটন গ্রামে একটি তালগাছ কেটে শত শত বাবুই পাখির ছানা ও ডিম ধ্বংস করে দেওয়ার ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই নির্মম ঘটনা ঘটে, যেখানে স্থানীয়দের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও গাছ কাটার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি মালিকপক্ষ। বহু বছর ধরে বাবুই পাখির প্রিয় আশ্রয়স্থল ছিল তালগাছটি, যার প্রতিটি ডালে বাসা বেঁধেছিল অসংখ্য পাখি। গাছ কাটা শেষে নিচে পড়ে থাকা ছানার মৃতদেহ, ডিম ও ভাঙা বাসা দেখে অনেকের চোখে পানি এসে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা মোবারক আলী ফকির তার বাড়ির পাশের তালগাছটি বিক্রি করেন ফারুক ব্যাপারীর কাছে। ফারুক তাৎক্ষণিক শ্রমিক এনে গাছ কেটে ফেলেন। স্থানীয় সচেতন যুবকরা গাছটি না কাটার অনুরোধ করে বাজারমূল্য পরিশোধের প্রস্তাব দিলেও তা উপেক্ষা করা হয়। প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকার পরিবেশবাদী যুবক জাহিদুল ও সাব্বির জানান, গাছটি শুধু একটি গাছ নয়, এটি ছিল জীবনের কেন্দ্র। পাখির কলতান, ছানার চঞ্চলতা সব মিলিয়ে এটি প্রকৃতির অনন্য নিদর্শন ছিল।
এই ঘটনাকে অনেকে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে দেখছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুদুর রহমান জানান, তিনি গাছ কাটার পর ঘটনাটি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যান এবং ইউএনওকে অবহিত করেন। প্রশাসনের নির্দেশে গাছটি জব্দ করা হয়েছে। পরদিন সকালেই উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ফরেস্টার আরিফুর রহমান জানান, ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর ঝালকাঠি নেটওয়ার্ক সদস্য আল-আমিন বাকলাই জানান, বাবুই পাখি শুধুই একটি পাখি নয়, এটি বিশ্বব্যাপী পরিবেশ ও নান্দনিকতার প্রতীক। এমন বর্বরতা শুধু প্রকৃতির ক্ষতি নয়, বরং মানবিকতার বিপর্যয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বাবুই পাখির বাসা ধ্বংস করা ফৌজদারি অপরাধের আওতায় পড়ে এবং এতে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি তোলেন পরিবেশবাদীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা ইয়াসমিন জানান, ঘটনাটি নিয়ে প্রশাসন ও বন বিভাগ যৌথভাবে তদন্ত করছে এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এলাকাবাসীর মতে, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কেবল বিচারের উদ্যোগ নয়, দরকার ব্যাপক জনসচেতনতা এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সামাজিক অংশগ্রহণ।