প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ২১:৩৭
মাত্র ১৩ বছর বয়সে পুরো পরিবারের হাল ধরেছে কিশোর তোফাজ্জল হোসেন। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দী গ্রামের এ কিশোর প্রতিদিন সকালে একটি ভাঙাচোরা বাইসাইকেলে করে ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পান বিক্রি করে জীবিকা চালায়। মা নেই, বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত, দাদি শয্যাশায়ী আর বড় বোন মানসিক ভারসাম্যহীন—এই অবস্থায় চারজনের সংসার চালাতে বাধ্য হচ্ছে সে।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছোট একটি ঘরে কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে তাদের। ঘরের এক পাশে শুয়ে আছেন তোফাজ্জলের ৮২ বছরের দাদি সমিতা বিবি, যার পা ভেঙে যাওয়ার পর থেকে তিনি একেবারে বিছানায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তোফাজ্জল প্রতিদিন গিয়ে পান সংগ্রহ করে খাসিয়াপুঞ্জিতে বিক্রি করে মাত্র দুই থেকে আড়াইশ টাকার মতো আয় করে।
তার বাবা আলী আহমদ জানালেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। ছেলেই এখন পুরো পরিবারের ভরসা। তাদের খাদ্য আর ওষুধের প্রয়োজন মেটাতে তোফাজ্জলের উপার্জন খুবই অপ্রতুল। দাদি বলেন, ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে হয়, ওষুধ কিনতে না পারায় শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। প্রতিবেশীদের সামান্য সহায়তা আর আল্লাহর রহমতেই বেঁচে আছেন বলে জানান তিনি।
প্রতিবেশীরাও জানিয়েছেন, পরিবারটি অত্যন্ত অসহায়, যাদের আত্মীয়স্বজনও পাশে নেই। কিশোর তোফাজ্জলের মতো একজন শিশু যে চরম দারিদ্র্যেও পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে জীবনযুদ্ধে লড়ছে, তা অনেক বড় উদাহরণ। তারা মনে করেন, এমন একটি পরিবার সরকারি সহযোগিতার আরও বেশি হকদার।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমেদ জানান, সরকারিভাবে একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে পরিবারের অসুস্থ সদস্যদের চিকিৎসা এবং তোফাজ্জলের স্বপ্ন পূরণের জন্য আরও সহায়তা প্রয়োজন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর জানান, তোফাজ্জলের পরিবারের পাশে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। বোনের জন্য প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড, শুকনো খাবার ও চালের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তোফাজ্জল চাইলেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, কিন্তু সে পরিবারের দায়িত্ব নিতে চায়।