প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫, ১০:১৪
মানুষের জীবন মানেই পরীক্ষা। একজন ইমানদার ব্যক্তি দুনিয়াতে শান্তিতে থাকবেন, সব কিছু তার ইচ্ছামতো চলবে—আল্লাহ এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। বরং কোরআনে কারিমে আল্লাহ বলেন, “আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, ধন-সম্পদ, জান-মাল ও ফল-ফসলের ঘাটতির মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।” (সূরা বাকারা: ১৫৫)। এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, একজন মুমিনের জীবনে দুঃখ-কষ্ট আসবেই, আর সেই কষ্টে ধৈর্য ধারণ করাটাই ঈমানের অংশ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কোনো মুসলমান দুঃখ-কষ্টে পতিত হলে, এমনকি যদি তার পায়ে একটা কাঁটা বিধেও, তাও তার গুনাহ মোচনের কারণ হয়ে যায়।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)। অর্থাৎ দুনিয়ার প্রতিটি বেদনা মুমিনের জন্য পাপ মোচনের দরজা খুলে দেয়। তাই দুঃখে হতাশ না হয়ে আল্লাহর কাছে ধৈর্য ও সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত।
ইসলামে ধৈর্য তিন ধরনের: ইবাদতে ধৈর্য, গুনাহ থেকে বিরত থাকার ধৈর্য, আর বিপদে ধৈর্য। এই তিনটি ধৈর্যের সম্মিলনে একজন মানুষ প্রকৃত ইমানদার হয়ে ওঠে। ধৈর্যশীলদের জন্য কোরআনে অনেক উচ্চ মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদেরকে তাদের পুরস্কার সম্পূর্ণরূপে দেওয়া হবে হিসাব ছাড়া।” (সূরা জুমার: ১০)।
মহানবী (সা.) আমাদের এমন এক আদর্শ দিয়েছেন যেখানে তিনি নিজেই অসংখ্য কষ্ট সহ্য করেছেন। তায়েফে পাথর নিক্ষেপ, মক্কার কুরাইশদের নির্যাতন, সন্তানদের মৃত্যু—সবই তিনি ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন এবং উম্মতকে শিখিয়েছেন, বিপদের সময় আল্লাহর উপর ভরসা করাই আসল সাফল্য।
আমাদের উচিত, যখন বিপদ আসে, তখন হায়-হুতাশ না করে নামাজে দাঁড়িয়ে যাওয়া, কুরআন তিলাওয়াত করা এবং দোয়া করা। আল্লাহর রহমত কখন আসে, আমরা জানি না। হতে পারে আজকের ধৈর্য আগামীকালের রহমত হয়ে আসে।
একজন ইমানদার ব্যক্তি যেন দুনিয়ার প্রতিটি কষ্টকে আল্লাহর পরীক্ষা মনে করে, ধৈর্যের সাথে গ্রহণ করে, এবং আল্লাহর উপর ভরসা করে সামনে এগিয়ে যায়—এটাই ইসলামের শিক্ষার মূল কথা। যে ধৈর্য ধারণ করতে পারে, সে-ই আল্লাহর কাছে প্রিয় হয় এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জন করে।
তাই আসুন, আমরা নিজেদের জীবনকে ধৈর্য ও ইমানের আলোতে সাজাই এবং আল্লাহর পথে দৃঢ় থাকি, যেন আমাদের জীবন ও মৃত্যু হয় তাঁর সন্তুষ্টির সঙ্গে।