প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫, ২২:২৯
চা-বাগান, পাহাড় ও হাওর বেষ্টিত মৌলভীবাজারের হাইল হাওরে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া পানিফল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় বিক্রেতারা। পানিতে জন্মানো এই ফলটি স্থানীয়ভাবে ফুকল, মাখনা কিংবা শিঙড়া নামে পরিচিত। ফলটির বাইরের অংশে সূচালো কাঁটা থাকায় সাবধানে সংগ্রহ করতে হয়। স্থানীয়রা বাঁশের তৈরি চিমটা দিয়ে হাওর থেকে ফল তুলেন এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন।
মৌলভীবাজার শহরের হবিগঞ্জ রোড, কলেজ রোড, স্টেশন রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিফল বিক্রির দৃশ্য চোখে পড়ে। কেউ টুকরিতে ফল সাজিয়ে বসে আছেন, কেউবা ভ্যানগাড়িতে শহর ঘুরে বিক্রি করছেন। খুচরা ও পাইকারি উভয়ভাবেই বিক্রি হচ্ছে এই জলজ ফল। অনেক বিক্রেতা প্রতিদিন শতাধিক কেজি বিক্রি করে আয় করছেন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা।
পানিফল সাধারণত চৈত্র ও বৈশাখ মাসে বেশি পাওয়া যায়। মৌসুমি এই ফলটির চাহিদা রাজধানীর পুরান ঢাকায় বেশি থাকলেও, স্থানীয়দের মাঝে এখনও সেই আগ্রহ দেখা যায় না। তবে অতীতের তুলনায় হাওরের পরিধি কমে আসায় ফলনের পরিমাণ কমে গেছে। এ কারণে পানিফল ব্যবসায় জড়িতদের সংখ্যা কমছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
তিন যুগ ধরে এই ব্যবসায় যুক্ত শহরতলীর আব্দুর রশিদ জানান, তার পরিবার বহু বছর ধরে মাখনা বিক্রি করে আসছে। পাইকাররা শত শত মণ ফল কিনে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন। অপর এক বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, হাওরের ফল কমে আসায় আগের মত সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
খুচরা ব্যবসায়ীরাও আশাবাদী। শহরের শান্তিবাগ এলাকার ওমর ফারুক জানান, মাত্র চার দিনে ৬০০ কেজি ফল বিক্রি করেছেন। একইভাবে আশরাফুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি রাজধানী থেকে ফল এনে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন এলাকায় ভ্যানে বিক্রি করছেন। তার প্রতিটি ভ্যানে দৈনিক ১০০ থেকে ১৬০ কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়।
এদিকে অনেক ক্রেতাই এই ফলকে ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে বিবেচনা করেন। রুমি বেগম জানান, তার সন্তানরা এ ফল চেনে না, কিন্তু তিনি পরিবারের সবাইকে খাওয়াবেন। কৃষিবিদ আলাউদ্দিন বলেন, পানিফল পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং কম খরচে চাষযোগ্য একটি ফল। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে এটি হতে পারে অর্থনৈতিক মুক্তির একটি হাতিয়ার।