২০০২ সালের ৩ মে দিনটি পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনে এক মর্মান্তিক দুঃখের দিন হয়ে আছে। সেদিন গভীর রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এমভি সালাউদ্দিন-২’ মেঘনা নদীতে ডুবে যায়, আর তাতেই নিখোঁজ হন শত শত যাত্রী। সরকারি হিসাব অনুযায়ী মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১৬০ হলেও স্থানীয়দের দাবি, সেই সংখ্যা অনেক বেশি।
২৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও অনেক পরিবার তাদের প্রিয়জনের অপেক্ষায় নদীর পাড়ে এসে দাঁড়ান। কেউ হাতে ধরে থাকেন প্রিয়জনের পুরনো ছবি, কেউ চোখ মুছেন নীরবে। নদীর দিকে তাকিয়ে তারা যেন এখনও বিশ্বাস করতে চান, হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জন কোনওভাবে ফিরে আসবে।
পটুয়াখালীর তেতুলিয়া, আগুনমুখা, বলেশ্বর, লোহালিয়া নদীর তীরে এই দিনটিতে ভিড় করেন স্বজনহারারা। সেখানে তাদের চোখে মুখে দেখা যায় এক গভীর যন্ত্রণা আর অমোচনীয় শোকের ছাপ। কেউ দোয়া করেন, কেউ নদীতে ফুল ছিটিয়ে দেন, কেউবা চুপচাপ নদীর দিকে চেয়ে থাকেন দীর্ঘক্ষণ।
লঞ্চ দুর্ঘটনা থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া মো. মাসুম মাহমুদ আজও ভুলতে পারেন না সেই রাতের কথা। তিনি জানান, মাত্র ১২-১৩ বছর বয়সে লঞ্চে উঠেছিলেন গ্রামের পথে ফেরার জন্য। অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন, ঘুমিয়ে পড়েছিলেন লঞ্চে। হঠাৎ চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়, পানি ঢুকতে দেখে কিছু বুঝে ওঠার আগেই নদীতে পড়ে যান।
সাঁতরে বাঁচার চেষ্টা করে দূরের একটি লঞ্চের আলো দেখতে পান, সেদিকে এগিয়ে গিয়ে কাছে যাওয়ার পর কাছি ফেলে তাকে উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, তার সঙ্গে থাকা চারজনের মধ্যে একজন মারা যান, বাকিরা কোনোমতে বেঁচে যান। আজও সেই স্মৃতি তাঁকে রাতে ঘুমাতে দেয় না।
এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে তখন দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। সংবাদমাধ্যম, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাধারণ মানুষ সবাই গভীর শোক প্রকাশ করেন।
আজ ২৩ বছর পরও যখন ৩ মে আসে, তখনই ভেসে ওঠে সেসব কান্না, হারিয়ে যাওয়া মুখগুলো আর অপূরণীয় ক্ষতির স্মৃতি। লঞ্চডুবির এই ঘটনাটি ইতিহাসে একটি গভীর বেদনার নাম হয়ে থেকে গেছে।