দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার ১নং খট্রামাধবপাড়া ইউনিয়নে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরীব, দুস্থ ও অসহায় মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফের চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, ভুয়া তালিকা তৈরি করে অন্তত ১৮শ' জনের নামে বরাদ্দকৃত প্রায় ১৮ টন চাল আত্মসাৎ করেছেন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যানসহ একাধিক জনপ্রতিনিধি।
এই ঘটনায় ইউনিয়নের প্রায় ৩ শতাধিক গরীব মানুষ চাল না পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও অমিত রায়।
অভিযোগে বলা হয়, বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান মো. ছদরুল শামিম স্বপন দায়িত্ব নেওয়ার পর ভিজিএফের তালিকায় মৃত ব্যক্তি, একাধিকবার নাম অন্তর্ভুক্তকরণ এবং এক ওয়ার্ডের লোকজনকে অন্য ওয়ার্ডে অন্তর্ভুক্ত করার মতো নানা অনিয়ম করা হয়।
স্থানীয় তাহাজ্জত আলী জানান, “আমার প্রতিবেশী রবিউল ইসলাম তিন বছর আগে মারা গেছেন, অথচ তার নাম এখনো ভিজিএফ তালিকায় রয়েছে।”
একইভাবে, মাধবপাড়া গ্রামের কাশেম আলীর স্ত্রী বেগম বলেন, “আমার সিরিয়াল ২৩৭৬ হলেও চাল নিতে গেলে জানানো হয় আমার নাম নেই।”
ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমার মাস্টার রোল নম্বর ২১০, কিন্তু তালিকায় নাম নেই। গরীবের চাল যদি চেয়ারম্যান খেয়ে ফেলে, তাহলে আমরা কোথায় যাব?”
অভিযোগকারী সাইমুমুর রহমান ডলারের দেওয়া তথ্যমতে, ১নং ওয়ার্ডে ৮৬ জন, ২নং ওয়ার্ডে ৭৫ জন, ৩নং ওয়ার্ডে ৬৩ জনসহ মোট ৮০৬ জনের নাম একাধিকবার ব্যবহার করে চাল উত্তোলন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য জানান, প্যানেল চেয়ারম্যান স্বপন ছাড়াও ১, ৭ ও ৮নং ওয়ার্ড সদস্যরা যৌথভাবে এই অনিয়মে জড়িত।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্যানেল চেয়ারম্যান মো. ছদরুল শামিম স্বপন বলেন, “পূর্বের চেয়ারম্যান আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। চাল বিতরণের দিন তদারকি কর্মকর্তাসহ সকল ইউপি সদস্য উপস্থিত ছিলেন। কোন অনিয়ম হয়নি।”
তদন্ত কর্মকর্তা ও ঘোড়াঘাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (হাকিমপুর অতিঃ দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. সুজন মিয়া জানান, “তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে, প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরই মন্তব্য করা সম্ভব হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় বলেন, “তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঘটনার পর পুরো ইউনিয়নে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকাবাসী দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।