হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে সরকারি টিউবওয়েল থেকে পানি আনাকে কেন্দ্র করে দুই মেম্বারপন্থী লোকজনের মধ্যে তিন ঘণ্টাব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ তিন রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এবং পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রোববার (১৩ এপ্রিল) সকাল সোয়া ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জলসুখা ইউনিয়নের মধ্যপাড়ায় সংঘর্ষটি ঘটে। সংঘর্ষে আজমিরীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক জিয়াউর রহমানসহ আরও একজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত হয় শনিবার (১২ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে। বক্কা মেম্বারের পক্ষের অলি মিয়ার মেয়ে ফারজানা বেগম বাড়ির পাশের সরকারি একটি নলকূপ থেকে পানি নিতে গেলে, আলাউদ্দিন মেম্বারের পক্ষের ওয়াহিদ মিয়ার আত্মীয় ওয়াসিম মিয়া তাকে বাঁধা দেন। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ওয়াসিম ফারজানাকে গালাগাল করেন ও তার চার বছরের শিশুকে গালে থাপ্পড় মারেন।
এই ঘটনার জের ধরে রোববার সকালে জলসুখা বাজারে অলি মিয়া ও আজমান মিয়ার মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়, যা পরে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। স্থানীয় লোকজন পরিস্থিতি সামাল দিয়ে দুজনকে বাড়ি পাঠালেও, খবর ছড়িয়ে পড়লে বক্কা মেম্বার ও আলাউদ্দিন মেম্বারের সমর্থকেরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষ চলাকালে দুই পক্ষ থেকে ব্যাপক হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের পাশাপাশি দুই পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তিন রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পরে সেনাবাহিনী এসে পুলিশকে সহায়তা করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
আহতদের মধ্যে এনামুল (৩০), কাউছার (২৮) ও শামীম মিয়া (৩৯) গুরুতর আহত হওয়ায় তাদেরকে হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকিরা স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এছাড়া সংঘর্ষ চলাকালে নিরীহ আদিল হোসাইনের ঘরও ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজমিরীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম মাঈদুল হাছান বলেন, “সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ তিন রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এলাকায় টানাপোড়েনের দীর্ঘদিনের ইতিহাস রয়েছে দুই মেম্বারের সমর্থকদের মধ্যে। পানির মতো একটি সাধারণ বিষয় নিয়েও এমন ভয়াবহ সহিংসতা এলাকায় চরম উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।