প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪:৪
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশে যেনতেনভাবে নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা সংশোধনসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। শুক্রবার বিকেলে নরসিংদীর সাটিরপাড়া কালী কুমার ইনস্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জেলা জামায়াত আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, গত সাড়ে ১৭ বছর এ দেশের মানুষ দুঃশাসনের মধ্যে ছিল, অসংখ্য মানুষ খুন, গুম, অপহরণ ও কারাবন্দি হয়েছে। জামায়াতের ওপর বিশেষভাবে নির্যাতন হয়েছে, ১১ জন শীর্ষ নেতা হত্যা করা হয়েছে। বিচারের নামে প্রহসন করে কাউকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, কাউকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ১৫ বছরে ক্ষমতাসীনরা ২৬ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, রাজনীতি করেছে বাংলাদেশে কিন্তু বউ-বাচ্চাদের বিদেশে পাঠিয়ে সেখানে বিলাসী জীবনযাপন করছে। কানাডায় বেগমপাড়া তৈরি করেছে, অথচ অন্যদের চোর বলেছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কার্যালয়গুলো তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে, নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে, কিন্তু আমরা এখনো নিবন্ধন ফিরে পাইনি, এটি লজ্জার বিষয়। আমাদের দেশপ্রেম ও অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার কারণে আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, যা ফিরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।
তিনি আরও বলেন, মিথ্যা মামলায় আটক জামায়াত নেতারা একে একে মুক্তি পেলেও এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো কারাগারে রয়েছেন, তাকে মুক্তি দিতে হবে। একে একে আমাদের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করা হয়েছে, আল্লাহ একজনকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তাকে সম্মানের সঙ্গে মুক্তি দেওয়া উচিত। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি মুক্তি দিতে দেরি করা হয়, তবে জামায়াত রাজপথে নামবে।
ভাষা আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ৫২ সালে যাঁরা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের স্মরণ করছি। কিন্তু বরকতের মা এখনো ভাঙা ঘরে বসবাস করছেন, এটি জাতির জন্য লজ্জার। যারা ৫২-এর চেতনা নিয়ে রাজনীতি করেছে, তারা দেশ চালিয়েছে, অথচ বরকতের মায়ের জন্য কিছু করেনি।
তিনি আরও বলেন, বিচারকরা আদালতে বসে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়ে রাতে টকশোতে এসে গর্ব করতেন। এ ধরনের বিচারকরা বিচারক হতে পারেন না, এরা জাতির কলঙ্ক। গণহত্যাকারীদের দেশে-বিদেশে বিচার হওয়া উচিত, জাতি তা দেখতে চায়।
তিনি শেখ হাসিনাকে খুনিদের গডফাদার হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, তার আশ্রয়ে খুনিরা লালিত-পালিত হয়েছে। আগে অনেকেই এসব বক্তব্যকে রাজনৈতিক বলত, কিন্তু এখন বিশ্ববাসী সব জানতে পেরেছে।
তিনি বলেন, অপরাধীদের বিচার হতে হবে, কিন্তু ন্যায়বিচারের নামে নতুন অন্যায় করা যাবে না। আমরা জুলুমের শিকার হয়েছি, তাই চাই না অন্য কেউ অন্যায়ের শিকার হোক।
নরসিংদী জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মো. মোছলেহুদ্দীনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় জনসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, আ ফ ম আব্দুস সাত্তার, আবদুল জব্বারসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।