প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২২, ০:৫৯
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে রেজাউল মন্ডল (৩৫) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সে গোয়ালন্দ পৌরসভার ২নম্বর ওয়ার্ড দেওয়ান পাড়ার মৃত লোকমান মন্ডলের ছেলে। তার স্ত্রী, ২ মেয়ে ও ১ ছেলে সন্তান রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যুৎষ্পৃষ্ট হলে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গোয়ালন্দ পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যায়ে পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি প্রশস্ত এবং প্রায় সাত ফুট গভীরতায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘের সাতটি আরসিসি ড্রেন নির্মাণ হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কাজটি পেয়েছে কে কে আর এন্টার প্রাইজ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়ভাবে পৌরসভার কাউন্সিলর সহ কয়েকজন সাব-ঠিকাদারির ভিত্তিতে গত এপ্রিল মাস থেকে ড্রেনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
মতিউর রহমান, রাজু শেখ সহ কয়েকজন শ্রমিক জানান, গোয়ালন্দ বাজার বড় মসজিদের কাছে স্থানীয় বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম বাবলুর বাড়ির সামনে খননকৃত ড্রেনের তারা লোহার রডের জাল বিছানোর কাজ করছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রেজাউল মন্ডল ঘরের আর্থিং রড ধরে ড্রেনের ওপর ওঠতে গেলে বিদ্যুতায়িত হয়ে গুরুতর আহত হয়। তাকে দ্রুত আশপাশের শ্রমিকরা ড্রেন থেকে তুলে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
তারা ক্ষোভের সাথে আরো বলেন, আমাদের কাজ করার সময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থেকে কোন হ্যান্ডগ্লোভস, মাথায় হেলমেট সহ নিরাপত্তা সরঞ্জমাদি দেওয়া হয়নি। হাতে হ্যান্ডগ্লোভস থাকলে হয়তো আজ এ দুর্ঘটনাটি ঘটতনা।
উপজেলা নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি ওয়াজেদ্দিন খান বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গেলে তাদের অবশ্যই প্রয়োজনীয় সরঞ্জমাদি দিতে হবে। না হলে রেজাউলের মতো অকালে অনেক শ্রমিক মারা যাবেন। আজ নিরাপত্তা সরঞ্জমাদি থাকলে হয়তো এভাবে তার মৃত্যু হতোনা।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সালাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ প্রয়োজনীয় সকল নিরাপত্তা সরঞ্জমাদি দেওয়া হয়েছে। অথচ তারা কেউ এসব সামগ্রী ব্যবহার করতে আগ্রহীনা। এ নিয়ে মাঝেমধ্যে তাদের সাথে রাগারাগি করি। যখন কোন কর্মকর্তা আসেন তখন তারা ওই সব সামগ্রী ব্যবহার করেন।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, পরিবার থেকে কোন অভিযোগ না পাওয়ায় সুরতহাল শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করেছি। এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র মো. নজরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, সকালে ড্রেনের কাজ করতে গিয়ে এক শ্রমিকের বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে মৃত্যুর খবর শুনেই আমি হাসপাতালে ছুটে যাই। নিহত শ্রমিকের অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহত। ও ঘটনায় গোয়ালন্দ পৌরসভা এ অসহায় পরিবারের পাশে থাকবে এবং পরিবারের যে কোন সহযোগিতার ব্যাপারে আমরা সব সময় খোজ খবর নিবো। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ড্রেনের কাজ বন্ধ থাকবে এবং শ্রমিকদের যতক্ষণ পর্যন্ত নিরাপত্তার সরঞ্জাম না দেয়া হবে ততদিন কাজ বন্ধ থাকবে। নিরাপত্তা জনিত সরঞ্জাম দিয়েই কাজ শুরু করা হবে।