প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২১, ২১:১৬
কঠোর লকডাউন ঘোষণায় ঢাকা ছাড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। স্বাস্থ্যঝুঁকির চেয়ে দিন এনে দিনে খাওয়া মানুষের কাছে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে লকডাউনে না খেয়ে থাকার ভয়। আয় না থাকলে চলবে কি করে। থাকা-খাওয়ার খরচ জোগাবে কোথা থেকে। এই দুশ্চিন্তায় তাদের ঘুম হারাম। ফলে যে করেই হোক গ্রামের বাড়ি পৌঁছাতে হবে।
আজ সোমবার থেকে শুরু হয়েছে সীমিত পরিসরে বিধিনিষেধ। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হলেও গতকাল রোববারও লোকজনকে রাজধানী ছাড়তে দেখা গেছে।
দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও নানা উপায়ে ঢাকা ছাড়ছেন তারা। যারা ঢাকা ছাড়ছেন, তারা জানেন না, কতদিন আর কতটা কঠোরভাবে পালন করা হবে লকডাউনের বিধিনিষেধ। সরকার কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেওয়ায় তারা মনে করছেন, গত বছরের লকডাউনের চিত্রই দেখা যাবে আবার।
অনেকে ধরে নিচ্ছেন, এই লকডাউন টানা চলবে ঈদুল আজহা পর্যন্ত। তাই অধিকাংশই পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকা ছাড়ছেন।
গতকাল দৌলতদিয়া বাস টার্মিলনাল গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস। তাই ছোট যানবাহন রিক্সা, ভ্যান,অটো, মাইক্রোবাসে করে ছাড়তে দেখা গেছে হাজারো মানুষকে।
কেউ কেউ আবার যাচ্ছেন ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে করে। দুই হাতে বড় দুই ব্যাগ, স্ত্রীর কোলে শিশু সন্তান নিয়ে হেঁটে ঢাকা থেকে নদী পার হয়ে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে যাচ্ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিল্লাল খাঁন।
কথা বলে জানা গেল মাগুরা যাবেন তিনি। সরাসরি কোনো বাস নেই। তবে হেঁটে ও ছোট ছোট যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ঘাট পর্যন্ত আসলেও বাকি পথটুকু কিভাবে যাবেন তারা?
এত কষ্ট করে কেন বাড়ি যাচ্ছেন প্রশ্ন করতে বিল্লাল খাঁন বলেন, ঢাকায় আমি ছোডখাডো ব্যবসা করি, মেসে থাকি খাই। লকডাউন পড়িলে ঘরে বসি থাকিলে আমারে খাওয়াবে কিডা কন দেহি? তারচে সুযোগ যেহেতু পায়েছি, ঈদ করি ঢাকায় ফিরবানে। ছাওয়ালডিও খুশি অবিনে। আয় রোজগার থাকবি না; আমারও খরচ বাঁচবিনে।
কাঁধে ব্যাগ আর বয়স্ক দাদির হাত ধরে ঘাট পার হয়ে যাচ্ছিলেন স্কুলছাত্রী রুবিয়া খানম। যাবেন যশোর মনিরামপুর। কীভাবে যাবে জানতে চাইলে বলে, শুনেছি সড়কে ছোট ছোট গাড়ি পাওয়া যাবে। ছোট যানবাহন বদলে বদলে যাব।
বয়স্ক দাদি এভাবে যেতে পারবে কি না জানতে চাইলে সে বলে, আমার আব্বু-আম্মু কয়েক দিন আগে বাড়ি গিয়ে লকডাউনে আটকা পড়েছেন। সামনে আবার লকডাউন দেবে। তাই আমি আর দাদি চলে যাচ্ছি। সবাই বাড়িতে ঈদ করব।
এক মাসের নবজাতক কোলে নিয়ে ঢাকা ছেড়ে মাদারিপুর যাচ্ছিলেন এক দম্পতি। যে করেই হোক বাড়ি পৌঁছাতে হবে। কারণ লকডাউন শুরু হলে আর যাওয়া যাবে না। সন্তানকে নিয়ে তারা প্রথম ঈদ করতে চান পরিবারের সঙ্গে।
রাস্তায় দেখা মিলল সদ্য পাকস্থলির অপারেশন করা রোগী তাসলিমা ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কয়েক দিন আগে অপারেশন করিয়েছেন তাসলিমা। তাকে আরো কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হতো। কিন্তু ঢাকায় থাকার ব্যবস্থা নেই। লকডাউনে বিপাকে পড়তে হবে। তাই ঝুঁকি নিয়েই গোপালগন্জ যাচ্ছেন তারা।
ভাঙ্গাগামী দিনমজুর আলী হোসেনও ঢাকা ছাড়ছেন একই কারণে। তিনি বলেন, লকডাউনে কাম-কাইজ পামু কই? খাওন দিব কিডা? অহন সব লইয়া যাইগা, আবার ছাড়লে ডাহা আইসমুনে।
সীমিত পরিসরে লকডাউনের মধ্যেই কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় রাজধানী ও আশপাশের এলাকা ছাড়তে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। এতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে চাপ বেড়েছে যাত্রীদের।
স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ফেরিতে গাদাগাদি করে যাত্রীদের পদ্মা নদী পার হতে দেখা গেছে। কোনো ফেরি পাড়ে ভিড়লেই মানুষ হুমড়ি খেয়ে উঠছে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, মহাসড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চেক পোস্ট বসিয়ে ঘাটে আসার আগেই যানবাহন ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া সড়কে থ্রি হুইলার, অটো, রিক্সা চলাচলে বাধা প্রধান করছি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাটের মহাব্যবস্থাপক মো. ফিরোজ শেখ জানান, ১৩টি ফেরি জরুরি সেবার যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপারের জন্য ব্যবহত হচ্ছে।
নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরিগুলো নদী পারাপারে একটু সময় বেশি নিচ্ছে। আবার লঞ্চ চলাচলও বন্ধ আছে। যে কারণে ঘাটে যাত্রীদের চাপ কিছুটা বেশি।