স্থবির হয়ে পরেছে টাঙ্গাইলের তাঁত পল্লী। ঈদের আগে শাড়ী তৈরির চিত্র এবার পাল্টে গেছে, বিপণী বিতানগুলি বন্ধ থাকায় তার প্রভাব পড়েছে তাঁত পল্লীতে চাহিদা নেই তাঁত শাড়ির। দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে হাজার হাজার তাঁত শ্রমিক।
টাঙ্গাইল জেলা শহর থেকে দক্ষিনে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে পাথরাইল ইউনিয়ন উল্যেখযোগ্য একটি তাঁত বাজার। এবার করোনার কারনে সৃষ্ট লকডাউনের প্রভাব পড়েছে তাত পল্লীতে, পাল্টে গেছে তাঁতপল্লীর চিরচেনা রূপ, শপিং মল বন্ধ থাকায় চাহিদা নেই তাঁত শাড়ির। শপিং মল গুলিতে খুচরা বা পাইকারি নেই কোন ক্রেতার আনাগোনা, যার প্রভাব পরে সরাসরি তাঁত পল্লীতে।
টাঙ্গাইলের পাথরাইল বাজারের ব্যবসায়ীরা তাঁতশাড়ি উৎপাদন ও ব্যবসার সাথে জরিত। এখানে প্রায় আড়াই শতাধিক পরিবার এই তাঁত শাড়ি ব্যবসার সাথে জরিত। এদের সাথে পরোক্ষ ভাবে আরও যুক্ত আছে দুইহাজারের উপরে পরিবার এরা সবাই এবার লোকসানের মুখে পড়েছে, দুশ্চিন্তায় দিশেহারা তারা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র, পবিত্র রমজান আসলেই মুখরিত হয়ে উঠত পাথরাইলের তাঁত বাজার, অথচ এবার দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। স্থবির পরে আছে এলাকার ব্যবাসা প্রতিষ্ঠান ও ছোট ছোট গড়ে উঠা তাঁত ফ্যাক্টরি গুলি অথচ অতিতে এই সময়ে পাথরাইল বাজারে ঢুকলেই তাতের মাকুর শব্দে মুখরিত থাকত, এবার নেই কোন তাঁতের মাকুর শব্দ। দূর দুরান্ত থেকে ক্রেতা না আসায় ফাঁকা পরে আছে বাজার। এবার ঈদে তাঁত পল্লীতে নেই কোন আমেজ, এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গড়ে উঠা বিক্রয় কেন্দ্রগুলি বন্ধ, কারন দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসতে পারছেনা।
দুশ্চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীরা, টাঙ্গাইল পাথরাইলের তাঁত ব্যবসায়ীরা। এখানে সাধারনত ঈদ, পুজা, পহেলা বৈশাখ পাইকারি ও খুচরা বাজার বেশ জমে উঠে। এবার লকডাউনের কারনে স্থবির হয়ে পড়েছে শাড়ির বাজার, ঈদ ও পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে তারা প্রচুর শাড়ি মজুদ করেছিল পরপর দুইবার লকডাউনের কারনে তারা দিশেহারা।
রঞ্জিত কুমার দাস বলেন, মহাজনেরা আমাদের শাড়ি যদি না নেয় তবে এই শাড়ি আমরা কোথায় বিক্রি করব, আমরা খাব কি, কিভাবে চলবে আমাদের ব্যবসা, তাহলে আমাদের তাঁত বন্ধ করে দিতে হবে। ইতিমধ্যে কয়েকটা তাঁত যন্ত্র আমি বন্ধ করে দিয়েছি কারন শ্রমিকদের টাকা দিতে পারছিনা।
তিনি আরও জানান, আমাদের এলাকার শাড়ি হাঁটগুলিতেও বেচাকেনা নেই, লকডাউন থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা খুচরা ও পাইকারি ক্রেতারা হাটে আসছেনা।
যজ্ঞেশ্বর এন্ড কোম্পানির মালিক রঘুনাথ বসাক জানান, গত বছর ঈদ সামনে রেখে পাথরাইলে উৎপাদিত মোট শাড়ির ৮০ শতাংশ অবিক্রীত রয়ে গেছে। গতবছর করোনার কারনে লকডাউনের সময় আমাদের অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে আমরা ঋণগ্রস্থ হয়েছি সেটা পুষিয়ে না উঠতেই এবার একই অবস্থা। ব্যবসা চালাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি, ব্যাংক লোন তাঁতিদের বেতন। এদিকে ঘরে অনেক শাড়ি মজুদ রয়ে গেছে বিক্রি করতে পারছিনা। সরকার যদিও আমাদের গত বছর প্রনোদনা দিয়েছিল তাতেও আমাদের কাজ হচ্ছেনা আমরা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ছি কিভাবে আমরা ব্যবসা টিকিয়ে রাখব বুঝতে পারছিনা।
রঘুনাথ বসাক আরও বলেন, সরকার আগামি রবিবার থেকে বিধি নিষেধ তুলে দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে। যদি ঈদের আগে আর লকডাউন না আসে তাহলে এই কয়দিনে কমবেশি কিছু শাড়ি বিক্রি হবে। তাহলে হয়ত এই শিল্পের সঙ্গে জরিতরা কষ্ট হলেও কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে।
#ইনিউজ৭১/জিয়া/২০২১