প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২১, ১০:৫৬
সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ ছিলেন জসিম। টমটম চালিয়ে তার যা আয় হতো, তা দিয়েই পরিবারের ভরণ-পোষণ চলতো। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা তার জীবন এলোমেলো করে দিয়েছে। যে জসিম ছিল সংসারের কর্তা, এখন তিনি সংসারের বোঝা। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের নয়াভাঙ্গুনী গ্রামে জসিম প্যাদার বাড়ি। বয়স ৪৩ বছর। জীবনের অর্ধেক মুহুর্তে এসে ওই দুর্ঘটনা তাকে নিস্তব্ধ করে দিয়েছে। যে টমটম চালিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। সেই টমটম-ই তাকে অসহায় করেছে। এখন স্ত্রী ও এক ছেলেসহ তিন সদস্যের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাকে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় উপজেলার ছোটবাইশদিয়ার চতলাখালী গ্রামে একটি করাতকলে (স’মিল) টমটম বোঝাই গাছ নিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন জসিম। এসময় গাছের নিচে চাপা পড়ে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ২৬ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু তার আর পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠা হয়নি। ওই ঘটনায় তার দু’টি পা অবশ হয়ে যায়। পায়ে বোধ শক্তি না থাকায় হুইল চেয়ারেই তাকে চলাফেরা করতে হচ্ছে। তার পঙ্গু জীবনের সহায়ক হিসেবে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন সহধর্মীণি।
স্থানীয়রা জানান, পঙ্গুত্ব জীবন নিয়েও জসিম ঘরে বসে থাকতে পারেনি। সংসারের খরচ মেটাতে বাড়ির কাছাকাছি ধার-দেনা করে একটি চায়ের দোকান দিয়েছেন তিনি। আজ সোমবার বিশ্ব পঙ্গু দিবস। এ উপলক্ষে রোববার দুপুরে জসিমের বাড়িতে যায় এ প্রতিবেদক। তখন একটি ভাঙা হুইল চেয়ারে বসে ছিলেন জসিম। এসময় কথা হয় তার সঙ্গে।
জসিম বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছি। পঙ্গু দেখে কোন এনজিও লোন (ঋণ) দেয়নি আমায়। তাই আরেকজনকে দিয়ে লোন ছাড়িয়ে একটি চায়ের দোকান দিয়েছি। স্ত্রীর সহায়তায় দোকানে আসা-যাওয়া করি। ওখান থেকে মাসে ৪-৫ হাজার টাকা রোজগার হয়। কিন্তু তা দিয়ে সংসারের খরচ, ছেলের লেখাপড়ার খরচ, লোনের কিস্তি, আমার ওষুধপাতির খরচ হয় না। প্রতিমাসে উল্টো ঋণগ্রস্ত হই।’
তিনি আরও বলেন, ‘পঙ্গু ভাতা পাই না। এবার আবেদন করছি। দেখি কি হয়!’
জসিমের স্ত্রী রোমানা বেগম বলেন, ‘তার চিকিৎসার জন্য ৭ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। এখনও প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা ওষুধ প্রয়োজন। এরমধ্যে ছেলের পড়াশুনার জন্য মাসে ২ হাজার টাকা খরচ। আর সংসারের আনুসাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা উপার্জন করা লাগলেও দোকান থেকে ৪-৫ হাজার টাকার উপারে আয় হয় না। ফলে প্রতিমাসেই তাদের ঋণের বোঝা ভারী হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘জসিমের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি যদি পঙ্গুভাতা না পান, তাহলে পঙ্গু ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।’