প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ২০:৩৬
কোন জমি যেন পতিত না থাকে’ বাংলাদেশে বৈশ্বিক মহামারী করোনা আঘাত হানার পর খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বরিশালের রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের কর্মকর্তারা ইন্সটিটিউটের তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
দীর্ঘদিন ইন্সটিটিউটের ভেতরে থাকা ১৭৫ শতাংশ পতিত জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেন। আশাতীত ফলাফলও লাভ করেন তারা। বিভিন্ন ফলদ বৃক্ষের পাশাপাশি সবজি চাষের উদ্যোগ নিয়ে প্রচুর ফসলও উৎপাদন করেন তারা।
যে পদ্ধতি অনুসরণ করে কর্মকর্তার অধিক ফসল উৎপাদন করেন তা দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন পার্শ্ববর্তী কৃষকরাও। কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, সব কৃষক পতিত জমি কৃষির আওতায় আনলে তারা নিরাপদ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে এবং আর্থিকভাবেও লাভবান হবে।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ৩ এপ্রিল দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। অধিক প্রকার ফসল উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার করতে হবে।
কোনো জমি যেন পতিত না থাকে। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এমন নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে চাষযোগ্য এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি/পতিত রাখা যাবে না বলে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে বরিশাল সহ বিভিন্ন জেলা প্রশাসন। যার ধারাবাহিকতায় বরিশালের রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট এর কর্মকর্তারা ক্যাম্পাসের ভেতরে ১৭৫ শতাংশ পতিত জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষের উদ্যোগ নেন।
ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে ডান পাশে চোখে পড়বে সারি সারি আম, লিচু, সুপারি ও নারিকেল গাছ। সুপারি গাছ জড়িয়ে বেড়ে উঠেছে সীমের লতা। অন্যান্য গাছেও জড়িয়ে আছে সীম গাছের লতা। ক্যাম্পাসের পুকুরপাড়, ড্রেনের দুই পাশে, রাস্তার পাশে, জমির আইলে, গাছের নীচে ছায়া ও অর্ধ ছায়াযুক্ত সকল পতিত জমিতে সারি সারি মিস্টি কুমড়া, করল্লা,
লাউ, টমেটো, ব্রোকলী, লেটুস পাতা, বেগুন, পালংশাক, লাল শাক, বরবটি, ক্যাপসিক্যাম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম সহ ১৩ ধরনের শাক সবজির চাষ করেছে কর্তৃপক্ষ। রয়েছে দোতলা (ভার্টিক্যাল এগ্রিকালচার) কৃষিও, অর্থাৎ মাচায় করল্লা নীচে মিষ্টি কুমড়া। সব কৃষির ফলনও হয়েছে বেশ।
ইন্সটিটিউট সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অবকাঠামো-স্থাপনা এবং পুকুর বাদে ১৭৫ শতাংশ জমি পতিত ছিল। যেখানে কোন ফসল হত না। কখনও চাষ করা হয়নি। পুরো পতিত জমি এবার কৃষির আওতায় নিয়ে আসেন তারা। বারোমাস এতে কোন না কোন শাক সবজী হবে।
এছাড়া একই জমিতে চাষ করা হচ্ছে দোতলা কৃষি (ভার্টিক্যাল এগ্রিকালচার)। এর মাঁচায় করল্লা এবং নীচে চাষ করা হচ্ছে মিস্টি কুমড়া। এ পদ্ধতি অনুসরণের জন্য মাঠ দিবস সহ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের পতিত জমিতে কৃষি করতে ধাবিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এখানকার কর্মকর্তারা। স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা রিয়াজ সিকদার জানান, পতিত জমিতে ফসল হতো সেটা তিনি জানতেন না। ইন্সটিটিটের নতুন পদ্ধতির কৃষি দেখে তারাও পতিত জমিতে কৃষি করে সফল হয়েছেন।
রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষন ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ জিএম ইদ্রিস জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর পতিত জমিতে পরীক্ষামূলক বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি উৎপাদন করে কৃষকদের নতুন পদ্ধতিতে ধাবিত করা হচ্ছে। সব কৃষক পতিত জমি কৃষির আওতায় আনলে তারা নিরাপদ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে এবং আর্থিকভাবেও লাভবান হবে। যে কেউ এ পদ্ধতি অবলম্বন করে বাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তার পাশে বাগানে, ছায়ায়-অর্ধ ছায়া জমিতে এসব কৃষি করলে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বানিজ্যিকভাবে লাভবান হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।