প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২১, ১৭:১০
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) বরিশালের বিজ্ঞানীরা কোনো প্রকার কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই উচ্চফলনশীল জাতের ব্রি ধান-৮৭ চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। কম সময়ে উৎপাদিত ধান ঘরে তুলতে পারায় আগাম ধান কেটে অন্যান্য রবি শস্য উৎপাদনের সুযোগ পাচ্ছেন তারা।
এ ধানে চিটা এবং পোকা-মাকড়ের আক্রমণও কম। বেশি ফলন এবং চাল চিকন ও সাদা বর্ণের হওয়ায় নতুন জাতের এই ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। কৃষিবিদদের মতে, কৃষকরা পরামর্শ অনুযায়ী চাষাবাদ এবং পরিচর্যা করায় নতুন উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৮৭ এর ফলন বাম্পার হয়েছে। এই ধান কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে আশা করছেন তারা।
কৃষকদের সাথে আলাপে জানা যায়, ধান চাষ করার সময় কৃষকরা সাধারণত গড়ে তিনবার কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন। মূলত ধানের জমিতে মাজরা পোকা, পাতামোড়ানো পোকা, বাদামি গাছফড়িং ও গান্ধি পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার জন্য কীটনাশক প্রয়োগ করেন তারা।
এতে করে ধান চাষে কৃষকদের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবেশেরও ক্ষতিসাধন হয়। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট নতুন উচ্চফলনশীল ব্রি ধান উদ্ভাবন করেন। সফলতাও আসে।
সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটর উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৭৬ এর বীজ রোপণের পর কর্তনে সময় লাগে ১৬৩ দিন এবং ব্রি ধান-৭৭ কর্তনে লাগে ১৫৪ দিন। দুটি জাতেই গড়ে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়। ২০১৮ সালে ব্রি ধান-৮৭ নামে নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেন বিজ্ঞানীরা। এই ধানের বীজ রোপণের ১২৫ থেকে ১৩০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তুলেছেন কৃষক।
ফলনও হয়েছে বাম্পার। প্রতি হেক্টরে উৎপাদিত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ মেট্রিক টন ধান। নিয়ম মেনে নতুন জাতের এই ধান চাষ করার পাশাপাশি সঠিক পরিচর্যা করায় প্রত্যাশার চেয়েও ফলন বেশি হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ জাতের ধানে চিটা নেই বললেই চলে। আগাম ফসল কাটতে পারায় ওই জমিতে এখন সরিষা, আলুসহ অন্যান্য রবি শস্য করার উদ্যোগ নিতে পেরেছেন কৃষকরা। বাম্পার ফলনের খবরে প্রতিদিনই আশপাশের বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা দেখতে আসছেন নতুন জাতের ধান। তারাও আগামীতে উচ্চ ফলন পেতে এই ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
ব্রি-ধান চাষ পদ্ধতিঃ বীজতলা থেকে ধানের জমিতে চারা রোপণের ১০ দিন পর প্রতি ১০০ বর্গমিটারে একটি করে গাছের ডালপালা পুঁতে পার্চিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। চারা রোপণের ১৪ দিন পর থেকে ধানের শীষ বের হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার হাতজাল দিয়ে সুইপিং করে ক্ষতিকর ও উপকারি পোকার তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
কোন জমিতে ক্ষতিকর পোকার সংখ্যা বেশি দেখা গেলে প্রয়োজনে সকল জমিতে সুইপিং এর মাধ্যমে পোকা ধরে মেরে ফেলা হয়। সেই সাথে উপকারি পোকা জমিতে ছেড়ে দেয়া হয়। এতে করে, ধানের জমিতে উপকারি পোকামাকড় সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন করে ফেলে।
রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উপ-সহকারী প্রশিক্ষক মো. কামাল হোসেন জানান, সঠিক সময়ে কৃষকদের হাতে সঠিক বীজ তুলে দিয়েছেন তারা। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ম মেনে চাষাবাদ এবং পরিচর্যা করায় নতুন উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৮৭ এর ফলন বাম্পার হয়েছে।
রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ কৃষিবিদ জি.এম ইদ্রিস জানান, আগাম ধান কর্তন করায় কৃষকরা এখন রবি শস্য চাষ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে কৃষকের উৎপাদন এবং আয় দুটোই বাড়বে। এই ধান কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ব্রি এর প্রধান ড. মো. আলমগীর হোসাইন জানান, নতুন জাতের এই ধানের চাল চিকন এবং বর্ণ সাদা। বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক। কৃষকরা এই ধান চাষ করলে লাভবান হবেন। এছাড়া এই ধান কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।