মৌলভীবাজার জেলার চা-বাগানগুলোতে শুধুমাত্র চা নয়, সাথি ফসল হিসেবে গোলমরিচ চাষও শুরু হয়েছে। জেলার শ্রীমঙ্গল, রাজনগর, কমলগঞ্জ ও বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন চা-বাগানে সীমিত পরিসরে গোলমরিচ চাষ করা হচ্ছে। চা-বাগানের জন্য অত্যাবশ্যক ছায়াদানকারী বৃক্ষকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠে গোলমরিচের লতা।
গোলমরিচ মাংসসহ বিভিন্ন খাবারে স্বাদ বৃদ্ধিতে এবং রান্নায় গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দেশের চাহিদার প্রায় সবটাই বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও মৌলভীবাজারে এর চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। শ্রীমঙ্গল ও রাজনগর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে। স্থানীয় চা-বাগানের বাংলো এলাকায় ২৫ বছর ধরে গোলমরিচ চাষ করা হচ্ছে, প্রতিবছর দেড় থেকে দুই মণ গোলমরিচ বিক্রি হয়।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন চা-বাগান এবং গ্রাম ও পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে গোলমরিচ চাষ হচ্ছে। রাজনগর চা-বাগানের শ্রমিক পার্থ মণ্ডল বলেন, “লতাগুলো যে কোনো গাছের সঙ্গে পেচিয়ে দিলে হয়। আগস্টে ফল আসতে শুরু করে এবং ফেব্রæরিতে পরিণত হয়। পরে পাকা গোলমরিচ সংগ্রহ করা হয়।”
শ্রীমঙ্গলের হরিণছড়া চা-বাগানের ব্যবস্থাপক বিকাশ সিংহ জানান, “আমাদের চা-বাগানে ২০ বছর আগে লাগানো গোলমরিচের গাছগুলো এখনও আছে। শ্রমিকরাই দেখাশোনা করেন। যদিও বাণিজ্যিকভাবে সংগ্রহ করা হয় না, তবে ফলন আসে।” পাইকারি মসলার ব্যবসায়ী তাপস দেব জানান, স্থানীয় কিছু চাষি আমাদের কাছে বিক্রি করেন, তবে পরিমাণ কম। বর্তমানে প্রতি কেজি কালো গোলমরিচ ১,২০০ টাকা এবং সাদা গোলমরিচ ১,৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, ২০২২ সালে কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও রাজনগর উপজেলায় প্রদর্শনী প্রকল্প করা হয়েছিল। লতানো গাছে হলুদ ফুল ফোটে এবং ডিসেম্বরের শেষদিকে ফল লাল হয়। প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক গাছ থেকে চার-পাঁচ কেজি গোলমরিচ পাওয়া যায়। ফল সংগ্রহের পর গাছ থেকে আলাদা করে ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ করতে হয় এবং এক সপ্তাহ রোদে শুকানোর পর বাজারজাত করা হয়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, “পাহাড়ি এলাকার মাটি গোলমরিচ চাষের জন্য উপযোগী। আমরা বিভিন্ন জায়গায় চারা রোপণ করেছি এবং আগ্রহী কৃষকদের সহযোগিতা করছি।”
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, জেলার আবহাওয়া ও মাটি মসলাজাতীয় ফসল চাষের জন্য পুরোপুরি উপযোগী। স্থানীয় উদ্যোগ ও কৃষি বিভাগের সহায়তায় গোলমরিচ হতে পারে জেলার নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত।