শ্রীমঙ্গলের রাজঘাট চা-বাগান লেক: পাখির রাজ্য ও পর্যটকদের আকর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
এহসান বিন মুজাহির জেলা প্রতিনিধি , মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: শনিবার ২৫শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৩:৫৯ অপরাহ্ন
শ্রীমঙ্গলের রাজঘাট চা-বাগান লেক: পাখির রাজ্য ও পর্যটকদের আকর্ষণ

শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজারের রাজঘাট চা-বাগান লেক, প্রতি শীত মৌসুমে পরিণত হয় একটি বিস্ময়কর পাখির রাজ্যে। এই লেকটি এমন এক স্থান যেখানে পাখির কিচিরমিচির শব্দ এবং তাদের উড়ন্ত দল আকাশে এক অনন্য দৃশ্য তৈরি করে। মৌসুমী পাখিরা এখানে এসে লেকের স্বচ্ছ নীল জলে খেলাধুলা করতে থাকে, এবং এটি এক নতুন জীবনের সঙ্গীতের মতো শোনায়।  


রাজঘাট চা-বাগান, যা শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, এক বিশাল প্রাকৃতিক জলাধার। ১০ একর আয়তনের এই লেকটি চা-বাগানের সাথে ঘেরা, যা এর সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তোলে। তিন পাশে উঁচু-নিচু টিলা এবং এক পাশে অবস্থিত সড়ক লেকটির চারপাশের পরিবেশকে অসাধারণ করে তুলেছে।  


লেকের পানিতে ফুটে থাকা লাল শাপলা, কচুরিপানা এবং ঘেরা চা-বাগান পুরো দৃশ্যটিকে এক নতুন রূপ দেয়। শীতের সময়, এই লেকে জলচর পাখিরা ভিড় জমায়, এবং তারা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ায়, যা স্থানীয়দের জন্য এক অবিস্মরণীয় দৃশ্য হয়ে দাঁড়ায়। অতিথি পাখিরা এখানে খাবারের সন্ধানে লেকের চারপাশে বিচরণ করে এবং তাদের কিচিরমিচির শব্দে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।  


রাজঘাট লেকের সৌন্দর্য দেখে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করে। দর্শনার্থীরা এখানে এসে পাখিদের কিচিরমিচির এবং লেকের শান্ত পরিবেশে সময় কাটাতে উপভোগ করেন। স্কুল শিক্ষক মো. একরামুল কবীর বলেন, লেকটির চারপাশের সবুজ চা-বাগান এবং পাখিদের ভিড় এক অসাধারণ দৃশ্য সৃষ্টি করে।  


ফটোগ্রাফার কাজল হাজরা জানান, তিনি প্রতি বছর শীতকালে রাজঘাট লেকে আসেন, কারণ এখানে অনেক ধরনের পাখি আসে, বিশেষত পরিযায়ী পাখিরা। তিনি আরও বলেন, এখানকার পাখির ছবি তোলার জন্য স্থানীয় টিলার ওপর উঠে তা তোলা যায়, যা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।  


রাজঘাট চা-বাগানের শ্রমিক সন্তোষ তাঁতি জানান, শীতকালে পাখির আগমন শুরু হয় অক্টোবর মাস থেকে, এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে এটি সবচেয়ে বেশি হয়। এই সময়ে পাখিদের কলরবে লেক এবং এর আশপাশের পরিবেশ পূর্ণ হয়ে ওঠে।  


শ্রীমঙ্গল থেকে চট্টগ্রামে আসা পর্যটক সাহেদ ইকবাল বলেন, তিনি প্রতি বছর শ্রীমঙ্গলে আসেন এবং রাজঘাট লেক তার প্রধান আকর্ষণ। তিনি জানান, লেকের জলে পাখিদের খেলা এবং কিচিরমিচির শব্দ তাকে মুগ্ধ করে।  


রাজঘাট চা-বাগানের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বেশ শক্তিশালী। চা-বাগান কর্তৃপক্ষ পাখিদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পাহারা নিশ্চিত করে থাকে, যাতে কোনো প্রকার ঝুঁকি না ঘটে।  


শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইসলাম উদ্দিন জানান, রাজঘাট লেকের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধি করার জন্য প্রশাসন সচেষ্ট রয়েছে। তিনি বলেন, পাখির বিচরণক্ষেত্রের নিরাপত্তা এবং পর্যটকদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।  


রাজঘাট চা-বাগান লেকটি শ্রীমঙ্গল এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতার উৎস হয়ে উঠেছে। শীতকালে এটি পরিণত হয় একটি পাখির রাজ্যে, যেখানে প্রকৃতি, শান্তি এবং সৌন্দর্য একত্রিত হয়ে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য তৈরি করে।