মৌলভীবাজারে মাদরাসার সহকারী শিক্ষিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
এহসান বিন মুজাহির জেলা প্রতিনিধি , মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ৩রা অক্টোবর ২০২৪ ১১:৪১ পূর্বাহ্ন
মৌলভীবাজারে মাদরাসার সহকারী শিক্ষিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত জামেয়া আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা মাদরাসার শিক্ষিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে একই মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আলতাফুর রহমান সাদিকীকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

গত ১ অক্টোবর মৌলভীবাজার মডেল থানায় মাওলানা আলতাফুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা। তার দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে গতকাল অভিযুক্ত প্রিন্সিপাল আলতাফুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত মাওলানা আলতাফ মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ২নং পতনউষা ইউনিয়নের সুনারগাও পূর্ব বলরামপুর গ্রামের মৃতঃ আশিক মিয়ার পুত্র। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী শিক্ষিকা ২০১৯ সাল থেকে মাওলানা আলতাফুর রহমান পরিচালিত জামেয়া আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। শিক্ষিকা থাকাবস্থায় নানাভাবে বলপ্রয়োগ, প্রভাব খাটিয়ে ও প্রলোভন দেখিয়ে ২০২২ সালের ২০ মার্চ মহিলা মাদ্রাসা বন্ধ দিলে শিক্ষার্থী ও অন্যান্য শিক্ষকরা বাড়িতে চলে যান; কিন্তু প্রিন্সিপাল আলতাফুর রহমান ওই শিক্ষিকাকে বাড়িতে যেতে দেননি। মাদ্রাসায় একা রেখে রাতে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করেন।

পরবর্তীতে ওই শিক্ষিকা মাদ্রাসা থেকে চাকরি ছেড়ে দেন। কিছু দিন পর ২০২২ সালের মে মাসে সামাজিকভাবে ওই শিক্ষিকার বিয়ে হয়। বিয়ের পরেও ধর্ষণের ভিডিও শিক্ষিকার স্বামীর মোবাইলে ছাড়ার ভয় দেখিয়ে আলতাফুর রহমান প্রায়ই শিক্ষিকার সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন। শিক্ষিকার স্বামী বিষয়গুলো বুঝে মৌলভীবাজার উলামা পরিষদের নেতৃবৃন্দের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

উলামা পরিষদ তদন্তপূর্বক ধর্ষণের সঙ্গে মাওলানা আলতাফুর রহমানে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় মাওলানা আলতাফুর রহমানকে ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর ওলামা পরিষদ থেকে বহিষ্কার ও কওমি অঙ্গন থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। উলামা পরিষদের নেতৃবৃন্দ অফিসিয়ালভাবে প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্য ফেসবুকেও সভার এ সিদ্ধান্ত প্রচার করা হয়।

এর আগে ২০২৩ সালে আলতাফের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে উক্ত মাদরাসার তৎকালীন সভাপতি ও মৌলভীবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আলহাজ্ব আয়াছ আহমদ, মাওঃ মনসুরুল হাছান রায়পুরী, মুফতি শামছুদ্দোহা, মুফতি হাবিবুর রহমানসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ মাদরাসার মাওলানা আলতাফুর রহমান সাদিকী-কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি তার অপরাধ স্বীকার করেন। এরপর আলতাফকে তৎকালীন সময় মাদরাসার প্রিন্সিপালের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অব্যাহতির কয়েক মাস পরে আলতাফ স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজনের প্রভাব খাটিয়ে পুনরায় মাদরাসার প্রিন্সিপালের পদ দখল করেন। 

গ্রেফতারের বিষয়ে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, সদর উপজেলার অবস্থিত আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা মাদরাসায় প্রিন্সিপাল মাওলানা আলতাফুর রহমান সাদিকীকে একই মাদরাসার শিক্ষিকাকে ধর্ষণ ও অপহরণ চেষ্টা মামলার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার (২ অক্টোবর) দুপুরে মৌলভীবাজার আদালতে পাঠানো হয়েছে। বর্তমাসে আসামী জেলা কারাগারে রয়েছে।