ময়মনসিংহে প্রতিদিন বিয়ে ৫৭টি, বিচ্ছেদ ২০টি !

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার ১৪ই এপ্রিল ২০২৪ ০৯:২৬ অপরাহ্ন
ময়মনসিংহে প্রতিদিন বিয়ে ৫৭টি, বিচ্ছেদ ২০টি !

ময়মনসিংহে বাড়ছে বিয়ের হার। সেই সঙ্গে বাড়ছে তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদ। আর এর অন্যতম প্রধান কারণ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক (পরকীয়া) এবং দাম্পত্য জীবনে অক্ষমতা, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনার অভাব, অল্প বয়সে বিয়ে। এসবকেই বিবাহ বিচ্ছেদের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছর জেলায় দৈনিক গড়ে বিয়ে হয়েছে ৫৭টি আর বিচ্ছেদ ঘটেছে ২০টি করে। 


ময়মনসিংহ জেলায় প্রায় ৬০ লাখ লোক বসবাস করে। জেলা সাব-রেজিস্ট্রারের তথ্য থেকে জানা যায়, এ জেলায় ২০২৩ সালে বিয়ে হয়েছে ২০ হাজার ৮০৫টি। এর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটেছে ৭ হাজার ৩০০টি। সে হিসাবে দৈনিক গড়ে ৫৭ বিয়ে এবং ২০ টির মতো বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। সে হিসাবে বিচ্ছেদের হার প্রায় ৩৩ শতাংশ। এর আগের বছর ২০২২ সালে ২০ হাজার ২১৩টি বিয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটেছে ৬ হাজার ৩৯০ টি। সে হিসাবে দৈনিক গড়ে ৫৬ বিয়ে এবং ১৮ টির মতো বিচ্ছেদ ঘটেছে। ২০২১ সালে ১৯ হাজার ৯৩৩টি বিয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয় ৫ হাজার ৯১১ টি। ২০২০ সালে ২১ হাজার ৮টি বিয়ের বিপরীতে বিচ্ছেদ ঘটে ৫ হাজার ৫৩২টি। 


বিয়ে বিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জজ আদালতের আইনজীবী নাহরিন সুলতানা নীলা বলেন, ‘আমি ১৪ বছর ধরে আইন পেশায় নিয়োজিত। এর মধ্যে ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) হয়ে কাজ করেছি নারীদের নিয়ে। বিয়ে বিচ্ছেদে আমরা অনেকগুলো কারণ লক্ষ্য করতে পেরেছি। এর মধ্যে: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্দেহ ও সমন্বয়হীনতা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার, পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া, অল্প বয়সে বিয়ে, বহুবিবাহের কারণে মূলত বিয়ে বিচ্ছেদ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।’ 


তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট আইন থাকলেও সঠিক প্রয়োগ না হওয়ায় কোনো ভাবেই এটি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বিয়ে বিচ্ছেদ নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে আইনের সঠিক প্রয়োগের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। 


এবিষয়ে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপ-পরিচালক নাজনীন সুলতানা বলেন, ‘এগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিয়ে বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ মানুষের মানসিকতা। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব আর বহুবিবাহ।’ 


ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা এ বিষয়ে বলেন, ‘জেলার অধিকাংশ মানুষ কর্মের সন্ধানে প্রবাসে বসবাস করেন; যার কারণে এর প্রভাব পড়ে স্ত্রীর ওপর। সেই সুযোগ ও একাকীত্ব দূর করার জন্য স্ত্রী অন্য সম্পর্কে জড়ান। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারের কারণে মানুষ পরকীয়ায় জড়াচ্ছেন। সাধারণ মানুষকে এ থেকে সচেতন করতে বিট পুলিশিং জোরদার করা হচ্ছে।’ 


বিয়ে বিচ্ছেদ কমিয়ে আনতে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে সবাইকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।