এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারলো না বিয়ের দাবিতে ১১দিন ধরে অনশনে থাকা নাসরীন সুলতানা (১৭) নামে এক শিক্ষার্থী।
রোববার(৩০ এপ্রিল) সকালে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হলেও প্রেমিক মিজানুর রহমান মিজানের বাড়িতে ১২তম দিনে অনশনে রয়েছে নাসরীন।
প্রেমিক মিজান লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রামের শাখা নেওয়াজের ছেলে। নাসরীন সুলতানা একই এলাকার নাজিম উদ্দিনের মেয়ে। কিসামত চড়িতাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক শাখার চলতি এসএসসি পরীক্ষার্থী।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ ৫ বছর আগে নাসরীন সুলতানার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে প্রেমিক মিজানুর রহমান মিজানের। এরই মধ্যে পাশ্ববর্তি আদিতমারী কালীস্থান এলাকার লোকমান আলীর ছেলে আল আমিনের সাথে নাসরীনের বিয়ে দেয় পরিবার। বিয়ে হলেও সম্পর্ক অটুট রাখে প্রেমিক মিজান। বিয়ের এক মাসের মধ্যে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে আসে নাসরীন। পড়ালেখার পাশাপাশি নিয়মিত যোগাযোগ রাখে প্রেমিক মিজানের সাথে।
নাসরীন সুলতানা স্বামীর বাড়ি না গেলে ৩ বছর আগে স্বামী আল আমিন অন্যত্র বিয়ে করে ঘর সংসার শুরু করে। নাসরীনকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে সম্পর্ক চালিয়ে যায় প্রেমিক মিজান। প্রেমের সম্পর্ক থেকে দৈহিক সম্পর্কেও জড়ায় তারা।
প্রেমিক মিজান নাসরীনকে ফাঁকি দিয়ে গত ৪ মাস ধরে গোপনে সাবিনা আক্তার নামে অপর এক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। গত ১৬ এপ্রিল বিয়ের দাবিতে মিজানের বাড়িতে অনশন শুরু করে দ্বিতীয় প্রেমিকা সাবিনা আক্তার। প্রেমিক মিজানের অনুরোধে ওই বাড়িতে গিয়ে দ্বিতীয় প্রেমিকাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন নাসরীন।
এরপর প্রেমিক মিজান ও তার পরিবারের কথামত প্রথম স্বামী আল আমিনকে গত ১৮ এপ্রিল তালাক দেন নাসরীন। পরদিন রাতেই মোটা অংকে যৌতুকে দ্বিতীয় প্রেমিকা সাবিনাকে বিয়ে করেন প্রেমিক মিজান। খবর শুনে ওই দিন মিজানের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অনশন শুরু করে প্রথম প্রেমিকা নাসরীন সুলতানা। তাকে দেখে নতুন বউসহ মিজানকে বাড়ি থেকে পালিয়ে দেয় তার পরিবার।
অনশনের ১২ দিন হলেও বিয়ের দাবি ছাড়েনি নাসরীন। প্রেমিক মিজানের বাড়ির উঠানেই রাত কাটছে তার। রোববার(৩০ এপ্রিল) এসএসসি পরীক্ষা শুরু হলে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিলেও তাকে পরীক্ষা দিতে যেতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ নাসরীনের।
অনশনে থাকা এসএসসি পরীক্ষার্থী নাসরীন জানান, আমার সাথে ছেলের বিয়ে দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মিজানের বাবা আমার সহায়তায় সাবিনাকে অনশন থেকে সড়ায়। মিজান ও তার বাবার কথায় প্রথম স্বামীকে তালাক দিয়েছি। তারা পুরো পরিবার দীর্ঘ ৫ বছর ধরে আমাদের সম্পর্কের কথা জানে। মেনে নিতে চেয়েও সাবিনার পরিবারের দেয়া ৫ লাখ টাকা যৌতুকে তাকে বিয়ে করে। আমাকে পরীক্ষাও দিতে দেয়নি। সাদা কাগজে স্বাক্ষর না দিলে পরীক্ষার হলে যেতে দেয়নি মিজানের পরিবার। প্রেমিককে স্বামী হিসেবে পেতে পরীক্ষা দিতে যাওয়া হয়নি। বিয়ে না হলে আত্নহত্যার হুমকী দেন নাসরীন।
আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, আইনী জঠিলতার কারনে বিষয়টি জেনে তাদের মধ্যে আপোষ করে দেয়ার চেষ্টা করছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গন্যমান্য ব্যাক্তিরা আপোষের চেষ্টা করছেন। পরীক্ষা দিতে দেয়া হয়নি বিষয়টি জানালে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌছানোর ব্যবস্থা করা হত।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।