বরিশালে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ দীপাবলি উৎসব উদযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: রবিবার ২৩শে অক্টোবর ২০২২ ০৬:৪০ অপরাহ্ন
বরিশালে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ দীপাবলি উৎসব উদযাপন

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ দীপাবলি উৎসব উদযাপিত হয়েছে বরিশাল মহাশ্মশানে। ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে নগরীর কাউনিয়ার বিসিক রোডে অবস্থিত মহাশ্মশান ঘাটে প্রতিবছর উদযাপিত হয় এ উৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব কালীপূজার আগের দিন ভূত চতুর্দশীর পুণ্য তিথিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের প্রয়াত স্বজনদের সমাধিতে দীপ জ্বেলে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের ধর্মীয় এই আচারটি দুইশত বছর ধরে সার্বজনীন একটি অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ বছরে তিথি নক্ষত্র অনুযায়ী ২৩ অক্টোবর রবিবার বিকাল ৫টা ২৫ মিনিট থেকে সোমবার বেলা ১২:৩১ মিনিট পর্যন্ত এ উৎসব চলবে। 


প্রায় ছয় একর জমির উপরে অবস্থিত মহাশ্মশান এলাকা সন্ধ্যার পরপরই মোমবাতির আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠে পুরো শ্মশান এলাকা। মহাশ্মশানে কাঁচা-পাকা মিলিয়ে প্রায় ৬৫ হাজার সমাধি রয়েছে। প্রতিবছর কালী পূজার আগের দিন হিন্দু ধর্মালম্বীদের মধ্যে যাঁরা মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা ও নিজের পূণ্য অর্জনের জন্য প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী দীপাবলি অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবে যোগ দিতে পাশর্^বতী দেশ ভারত, শ্রীলংকা, নেপালসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশের হাজারো মানুষ বরিশাল মাহাশ্মানে আসেন। দিপাবলী উৎসবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম মহাশ্মশান পরিদর্শন করেন। এ সময় তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান মহাশ্মশান রক্ষা কমিটি ও পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ।


বরিশাল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি কাজল ঘোষ বলেন, এই অনুষ্ঠান ভারতে দীপাবলি উৎসব নামে পরিচিত হলেও বরিশালে দীপালী উৎসব হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। দলমত নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষ এ অনুষ্ঠান উপভোগ করতে আসেন।


মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার জানান, শুধু দেশেরই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহত্তর ও প্রাচীনতম মহাশ্মশান এটি। ভারত উপমহাদেশে এতবড় সমাধিস্থল আর নেই। উৎসব হিসেবেও বরিশালে এটি উপমাহদেশের সর্ববৃহত্তর দীপাবলি অনুষ্ঠান। আমরা যতদূর জানি এতো বৃহত্তর পরিসরে বরিশাল মহাশ্মশান ছাড়া অন্য কোনো দেশে দীপাবলি উৎসব অনুষ্ঠিত হয় না।


বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জি বলেন, দীপাবলি উৎসবে জন্য সব ধরনের আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানকে ঘিরে এ এলাকায় প্রতিবারের মতো মেলা বসেছে। কমিটির পক্ষ থেকে তোরণ নির্মাণ এবং আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে।  


বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, দীপাবলি উৎসবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরো মহাশ্মশান এলাকায় শতাধিক সিসি ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি করা হয়। এ ছাড়া র‌্যাবের একাধিক টিমসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনির সদস্যরা পেশাক ধারী ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছে।


দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহত্তর এই মহাশ্মশানে আছে, কবি জীবনানন্দ দাশের বাবা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত, পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা বিপ্লবী দেবেন ঘোষ, মনোরমা বসু মাসিমা, দনবীর অমৃতলাল দে, শিক্ষাবিদ কালিচন্দ্র ঘোষ, ২০০৫ সালে ঝালকাঠীতে জেএমবির বোমা হামলায় নিহত বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ের সমাধি মন্দিরসহ বহু খ্যাতিমান নারী পুরুষের সমাধি।