হিলিতে অর্থের অভাবে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর উন্নত চিকিৎসা বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম রব্বানী, হাকিমপুর উপজেলা প্রতিনিধি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: শুক্রবার ২২শে জুলাই ২০২২ ০৪:৩৫ অপরাহ্ন
হিলিতে অর্থের অভাবে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর উন্নত চিকিৎসা বন্ধ

“মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য” আসুন তৃতীয় শ্রেণি ছাত্রী মেধার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার বৈগ্রাম গ্রামের সাড়ে ১১ বছরের ইয়ামিন আকতার মেধা’র অর্থের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। মেধাকে দ্রুত সস্পর্শকাতর (স্তনের) প্লাস্টিক সার্জারি করাতে হবে। সার্জারি না করাতে পারলে পূর্বের অবস্থা ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এর চিকিৎসক। 


কেউ নেই কি হিলি পাবলিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মেধার পাশে দাড়ানোর মত?ছোট্ট মেয়ে মেধার শরীরের বড় সমস্যা,মেয়ে মানুষ বড় হচ্ছে,তাকে ভবিষ্যতে বিয়ে সাদী দিতে হবে।এমন শারীরিক অবস্থা থাকলে পরবর্তীতে শিশুকন্যা মেধার কি হবে? এমন নানান চিন্তায় আজ হতাশায় ভেঙ্গে পড়ছেন শিশুটির বাবা-মা। 


উন্নতচিকিৎসার জন্য মেয়েকে স্বাভাবিক জীবন দিতে প্রয়োজন অনেক টাকা। এতো টাকা কোথায় পাবে? হতদরিদ্র বাবা-মা তাই সন্তানের জন্য তারা সরকারসহ দেশের হৃদয়বান মানুষের কাছে সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়েছেন।শিশুকন্যাটির যত বয়স বাড়ছে ততই চিন্তা ভাবনা বাড়ছে অসহায় ও হতদরিদ্র এই বাবা-মায়ের। অর্থের অভাবে উন্নতচিকিৎসা করতে পারছেন না শিশুটির বাবা-মা।


প্রায় ৭ বছর আগে মেধার বয়স তখন ৪ বছর। মায়ের কোলে বসে মেধা মায়ের বুকের দুধ পান করছিলো। এমন সময় প্রতিবেশী এখলাছ নামে একজন পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাদের শরীরের উপরে গরম দুধ ছুড়ে ফেলে। গরম দুধে মেধার কচি শরীরের ডান পাশের কান থেকে কোমড় পর্যন্ত ঝলসে যায়।


পরে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশুটিকে ভর্তি করান। পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। এরপর উন্নতচিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়,সেখানে দীর্ঘদিন চলে তার চিকিৎসা। চিকিৎসা করাতে গিয়ে সংসারে যা ছিলো তা সব শেষ করে ফেলে হতদরিদ্র দিনমজুর বাবা ইলিয়াস আলী। 


চিকিৎসায় শরীরের ঘা শুকিয়ে গেলেও ক্ষত স্থানগুলো শক্ত ও জড়ো হয়ে গেছে, শিশুটির বর্তমান ক্ষত স্থানেগুলোতে জ্বালা-যন্ত্রনা করে।তার উপর সে মেয়ে মানুষ,কোমড় থেকে গলা আর গাল বিকট আকার ধারণ করেছে।ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এর চিকিৎসক বলছেন,উন্নতচিকিৎসার মাধ্যমে মেধার ক্ষত স্থানগুলো স্বাভাবিক হবে,প্লাস্টিক সার্জারি করতে হবে। তবে এটা একটি ব্যয় বহুল চিকিৎসা।


বাবা ইলিয়াস আলী একজন দিনমজুর,মানুষের বাড়িতে দিনহাজরা হিসেবে কাজ করেন।দিন শেষে যা মজুরি পান তা দিয়ে কোন রকম চলে তাদের সংসার।সংসারে ইলিয়াস আলীর দুই মেয়ে, ছোট মেধা ও বড় মেয়ে বগুড়ায় নার্সিংয়ে লেখাপড়া করে।দিনমজুর বাবার এক বুক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে বড় মেয়েকে নার্সিং পড়াচ্ছেন।খেয়ে না খেয়ে তারা বড় মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করেন।


হিলি পাবলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাফিউল ইসলাম রিটন বলেন,ইয়ামিন আকতার মেধাকে আমরা ফ্রি লেখাপড়া করাই।এসএসসি পর্যন্ত সে আমার স্কুলে ফ্রি পড়তে পারবে।আমি মেধার শিক্ষক হয়ে সমাজের বিত্তবানদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। মেধার চিকিৎসার জন্য সকলকে এগিয়ে আশার আহবান জানাচ্ছি। 


এদিকে শিশুটির মা মেহের বানু বলেন,আমরা গরীব মানুষ,স্বামীর রোজগারে বড় মেয়ের লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি কোন রকম সংসার চলে।তার উপর ছোট মেয়ের সেই দুর্ঘটনায় তার শরীর ঝলসে যায়।তার চিকিৎসায় সব শেষ হয়ে গিয়েছে।মেয়ে আমার বড় হচ্ছে,তাকে নিয়ে আমাদের চিন্তা ভাবনা আরও বাড়ছে।তাকে ভাল করতে হলে উন্নতচিকিৎসা করাতে হবে। তার জন্য এতো টাকা কোথায় পাবো। তাই সবার কাছে আমি আমার সন্তানের জন্য সাহায্য চাচ্ছি।


মেধার বাবা ইলিয়াস আলী বলেন,গরীবের যত বিপদ,বড় মেয়ে লেখাপড়া আর ছোট মেয়ের চিকিৎসা।আমি দিন মজুরি করে যা পাই তাই দিয়ে কোন রকম সংসার চলে যায়।বৃষ্টি নেই, মাঠে কাজও নেই তাই অনেক কষ্টে আছি পরিবার নিয়ে।কাজ হলে যা পাই তা দিয়ে কোনটা করবো?


নার্সিংয়ে পড়ুয়া বড় মেয়ে বলেন,গরীবের ঘরে জন্ম নেওয়াটাই অভিশাপ,অর্থের অভাবে আজ আমার ছোট বোনের চিকিৎসা করাতে পারছেনা বাবা-মা।ছোট বোনটাকে নিয়ে আমরা পরিবারের সবাই চিন্তিত।আমার বাবা সামান্য একজন দিনমজুর,তার উপার্জনের কোন রকম আমরা চলি।সব মিলে আমাদের সংসারে আজ নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। 


তাই সমাজের বিত্তবানদের সহানুভুতির সহিত ইয়ামিন আকতার মেধার প্রতি আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন তার পরিবার।আসুন আমরা যে যার স্থান থেকে পারি এই অসহায় শিশুকন্যাটিকে সাহায্য করি।মেধার পরিবারের সাথে যোগাযোগ ও সাহায্য পাঠানোর বিকাশ নাম্বার ০১৯২৭-২৪৬৩৫১।