সুন্দরবনের জন্য নতুন মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় জেলে ও কিছু সিন্ডিকেট। মাছ শিকারে তারা ব্যবহার করছে বিষ। অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না এ চক্রের কর্মকাণ্ড। যে কারণে মাছশূন্য হতে চলেছে সুন্দরবনের নদী ও খাল।
বিষের কারণে মাছের সঙ্গে মরছে অন্য জলজ প্রাণীও। খালের বিষ মিশছে নদীর পানিতে। অনিয়ন্ত্রিত বিষের দাপটে মাছের প্রজনন ও উৎপাদনও বিঘ্নিত হচ্ছে। সবমিলিয়ে হুমকিতে পড়েছে ম্যানগ্রোভ এই বনের বাস্তুসংস্থান।
কয়েকটি সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় জেলেরা বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করছে দেদার। এতে মানুষ খাচ্ছে বিষযুক্ত মাছ। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও।
র্যাব-৬ এর পরিচালক লে. কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ বলেন, সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরায় শুধু এক প্রকার মাছের ক্ষতি হচ্ছে না, সব মাছই ধ্বংস হচ্ছে। পাশাপাশি বন ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
বিষ দিয়ে মাছ শিকারের প্রবণতা শূন্যের কোঠায় আনতে কঠোর অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে র্যাব। একই সঙ্গে জেলেদের মহাজন ও সিন্ডিকেট চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
চিকিৎসকদের মতে, বিষক্রিয়ায় মারা যাওয়া মাছ খেলে মানুষের কিডনি ও লিভারে জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিষয়টি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, এখানকার বিস্তৃত নদীতে রয়েছে ৪৭৫টি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার মাছ বিষপ্রয়োগে মারা হচ্ছে।
‘এছাড়া বিষ প্রয়োগকৃত পানি পান করে বাঘ, হরিণসহ বনের নানা প্রাণীও রোগাক্রান্ত হচ্ছে। সুন্দরবনে সরাসরি অভিযানের অনুমতি না থাকায় মৎস্য বিভাগ অভিযানেও যেতে পারছে না।’
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি এর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
স্থানীয়রা জানালো, সুন্দরবনের ঢাংমারী, মরাপশুর, জোংড়া, ঝাপসি, ভদ্রা, নীল কমল, হরিণ টানা, কোকিলমুনী, হারবাড়িয়াসহ আশপাশ এলাকায় বন সংলগ্ন স্থানীয় অসাধু কিছু জেলে নামধারী লোক বিষ দিয়ে মাছ ধরছে। বেশি মুনাফার আশায় নিষিদ্ধ খালেও বিষ দিয়ে মাছ শিকার করছে। বিষাক্ত পানি সুন্দরবনের বিভিন্ন খাল থেকে ভাটার সময় নদীতেও নেমে আসে। এ কারণে নদীতেও এখন মাছ কম।
র্যাব-৬ সুন্দরবনে মোংলা উপজেলার জাপসি এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার চক্রের একজন মূলহোতাসহ ১২ জনকে ৭ এপ্রিল রাতে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে মাছ মারার বিষ ১০ বোতল, জাল ৪টি, নৌকা ৪টি এবং বিষ প্রয়োগে শিকার করা ৪০০ কেজি মাছ জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো সাদ্দাম বৈদ্য (২৭), শফিকুল ইসলাম বৈদ্য (৩৮), জাকির হোসেন (২৮), খায়রুল মোড়ল (২৫), সালাম গাজী (৩৬), বাচ্চু সানা (৩৫), আবু সাইদ সরদার (৩০), নাজমুল সরদার (২৮), আবুল হোসেন গাজী (২৮), শাহজাহান শেখ (৪৫), সালাম সানা (৩০) ও ইকরামুল সরদার (৩১)।
৮ এপ্রিল ভোর ৫টার দিকে সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের হায়াতখালী বন টহল ফাঁড়ির অধীনে থাকা কালিরখাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরার অপরাধে ২ জেলেকে আটক করে বন বিভাগ।
বানিয়াখালী স্টেশন কর্মকর্তা নির্মল কুমার মন্ডল ও হায়াতখালী বন টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে তাদের হাতেনাতে আটক করা হয়।
এ সময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে একটি নৌকা, ভেশাল জাল ও দুই বোতল কীটনাশক উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো মাহবুব ঢালী ও হাসান গাজী।
খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এজেডএম হাছানুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে বন আইনে মামলা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের কয়রা উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।