অভাবী প্রতিবেশী সম্পর্কে বিশ্বনবির ঘোষণা ও করণীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার ১৮ই ডিসেম্বর ২০১৯ ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন
অভাবী প্রতিবেশী সম্পর্কে বিশ্বনবির ঘোষণা ও করণীয়

ব্যক্তি পরিবার সমাজে আত্মীয়-স্বজন ছাড়া যাদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ঘোষণা এসেছে তারা হলেন ‘প্রতিবেশী’। প্রতিবেশীদের অধিকার ও তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে কুরআন-সুন্নায় বিশেষ তাগিদ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ককে মুমিন হওয়ার পূর্বশর্তও ঘোষণা করা হয়েছে।

আল্লাহর ইবাদত বন্দেগির পর পিতামাতা ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহারের নির্দেশের পাশাপাশি প্রতিবেশির সঙ্গেও সদাচরণের জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘আর ইবাদত কর আল্লাহর; তার সঙ্গে কাউকে অংশীদার স্থাপন করো না। পিতামাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, ইয়াতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির এবং অধীনস্ত দাস-দাসীর প্রতিও ভালো ব্যবহার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক-গর্ বিতজনকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩৬)

এ আয়াতে তিন শ্রেণির প্রতিবেশির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যাদের প্রত্যেকের সঙ্গে উত্তম আচরণের কথা বলা হয়েছে। এ তিন শ্রেণির প্রতিবেশি হলো-
> এমন প্রতিবেশী যাদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্কও রয়েছে।
> এমন প্রতিবেশী, যাদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই, শুধু পাশাপাশি বসবাসের সম্পর্ক রয়েছে।
> এমন প্রতিবেশী, যারা সাময়িক সময় সঙ্গ দেয়ার কারণে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। তা হতে পারে ভ্রমণের সঙ্গী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গী, মসজিদের নামাজ পড়াকালীন সময়ের সঙ্গী আবার কর্মস্থলের সঙ্গী।

প্রতিবেশী যেভাবেই হোক না কেন, তাদের প্রতি সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন-
‘সে ব্যক্তি প্রকৃত মুমিন নয়, যে পেট ভরে খাবার গ্রহণ করে অথচ তার পাশেই তার প্রতিবেশী অভূক্ত থাকে।’ (বায়হাকি, মিশকাত)

অন্য হাদিসে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার তাগিদ দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৩বার শপথের সঙ্গে ঘোষণা করেন-
‘আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়। প্রশ্ন করা হলো- হে আল্লাহর রাসুল! কে সে ব্যক্তি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন- ‘যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।’ (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)

কুরআন সুন্নাহর ঘোষণা থেকে বুঝা যায় যে, প্রতিবেশীর অধিকারে ইসলাম সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছে। যেখানে শিথিলতা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রকৃত ঈমানদার হতে হলে প্রত্যেককেই তার প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। প্রতিবেশীর অধিকারের দিকে যথাযথ লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিবেশীর ক্ষতি করলে সে ব্যক্তি কোনোদিনই প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না।

সুতরাং প্রতিবেশী কাছের হোক কিংবা দূরের হোক, আপন হোক কিংবা পর হোক, সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হোক আর দীর্ঘ সময়ের জন্য হোক, তাদের সুখে-দুঃখে সহযোগিতা করাই মুমিনের অন্যতম পরিচয়। কেননা তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ এবং তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

অভাবী প্রতিবেশির প্রতি করণীয় হলো-
প্রতিবেশী ধনি কিংবা গরিব হোক সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। আর অসহায় প্রতিবেশীর সার্বিক সহযোগিতা ও খোঁজ-খবর রাখার ওপরও বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন বিশ্বনবি। তাদের সাহায্য-সহযোগিতাকে প্রকৃত ঈমানদার হওয়ার শর্ত হিসেবেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

শুরু হয়েছে শীতকাল। অনেক প্রতিবেশীর শীতের কাপড়ের অভাব। যারা এক দিকে ক্ষুধায় কষ্ট পায় আবার অন্যদিকে শীত-ঠাণ্ডায় মানবেতর জীবন-যাপন করে। তাদের সঙ্গে খাবার এবং কাপড় দিয়ে সহযোগিতায় হবে হাদিসের ওপর যথযথ আমল। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রতিবেশীর প্রতি সাধ্যমত সহযোগিতা ও ভালো ব্যবহার করার মাধ্যমে প্রকৃত মুমিন হওয়ার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর নসিহত মেনে সুখী সমাজ গঠনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ইনিউজ ৭১/এম.আর