মহান আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি নরওয়ে, যেখানে মধ্যরাতেও সূর্যের দেখা মেলে। প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের দেশ নরওয়ের কিছু অঞ্চলে দুই থেকে চার মাস পর্যন্ত একটানা সূর্যের আলো বিদ্যমান থাকে এবং রাতের অন্ধকারের পরিবর্তে আকাশে গোধূলির আলো ফুটে থাকে। আবার শীতকালে অঞ্চলটি থাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন। আর এ সময়ই নরওয়ের আকাশকে সাজিয়ে রাখে বর্ণিল আলোর খেলা, যাকে বলা হয় অরোরা বোরিয়ালিস বা সুমেরু প্রভা। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে মার্চের অন্ধকার রাতগুলোতে নরওয়ের আকাশে দেখা যায় এই আলোর খেলা। এ ছাড়া দৃষ্টিনন্দন বেলাভূমি, তুষারে ঢাকা সুউচ্চ পর্বত শ্রেণি, রহস্যময় সমুদ্র খাঁড়িগুলো নরওয়েকে রূপ দিয়েছে স্বপ্নরাজ্যের মতো। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুড়ঙ্গপথটি এখানেই অবস্থিত। ইতিহাস ও বর্ণিল সংস্কৃতির ধারক হিসেবে সুপরিচিত নরওয়ের শহর এবং নগরগুলো সর্বজনীন ও নজরকাড়া স্ক্যান্ডিনেভিয়ান স্থাপত্যে ভরপুর। প্রাণবৈচিত্র্যের দিক দিয়েও মহান আল্লাহ এই ভূমিকে সাজিয়েছেন নান্দনিক সব বৈশিষ্ট্য দিয়ে। তুষারশুভ্র সুমেরু শিয়াল থেকে শুরু করে বল্গা হরিণ, তিমি, সাদা লেজযুক্ত ঈগল, মেরু ভল্লুক, সিন্ধু ঘোটক এবং আরো অনেক ধরনের প্রাণী।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে নরওয়ে। সিআইয়ের ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুকের তথ্য মতে, এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ১৯১। জনসংখ্যার দিক দিয়ে মুসলমানদের অবস্থান দ্বিতীয়। কিন্তু দিন দিন সেখানকার সচেতন নাগরিকদের কাছে জনপ্রিয় ধর্ম হয়ে উঠছে ইসলাম। উত্তম জীবনপন্থার খোঁজে ইসলাম নিয়েই বেশি গবেষণা করছে নরওয়ের লোকজন। নরওয়েতে ইসলামের সূচনা ১২৬০ সালে, যখন তিউনিশিয়ার সুলতান নরওয়ের রাজা হকন হকন্সসনের জন্য মূল্যবান উপহার পাঠিয়েছিলেন; যদিও বিশ শতকের শেষার্ধ পর্যন্ত নরওয়েতে মুসলমানদের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য ছিল না। পরবর্তী সময় ইসলামের সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১১ সালে নরওয়েতে সরকারিভাবে নিবন্ধিত মুসলিমের সংখ্যা ছিল এক লাখ ২১ হাজার ৯৫। পিউ রিসার্চ সেন্টারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১০ সালে নরওয়েতে ৩.৭ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে ৫.৭ শতাংশ মুসলিম ছিল।
নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক ক্যারেন ভোগ বলেন, একসময় নরওয়ের নারীরা মুসলিম পুরুষদের বিয়ে করার মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করত। কিন্তু এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তারা ইসলাম নিয়ে বেশ অনুসন্ধান ও গবেষণা করছে, প্রচুর বইপত্র ও উৎসগ্রন্থ পড়ে এরপর ইসলাম গ্রহণ করছে। নরওয়ের নৃবিজ্ঞান গবেষক লিন্ডা নাওর বলেন, ‘বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। কোনো কিছু জানার উপায় সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী এবং এতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। আমিও ইসলাম নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা ও পড়াশোনার পর ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছি।’ ২০১২ সালে নরওয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সংস্কৃতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন একজন মুসলিম তরুণী হাদিয়া তাজিক। তাঁকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেনস স্টেলটেনবার্গ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নতুন মূল্যবোধ, শক্তি ও ভাবনাগুলোকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ (রয়টার্স) ‘এটি নবায়ন ও ধারাবাহিকতার একটি মিশ্রণ’।
হাদিয়া তাজিক লেবার পার্টির একজন সংসদ সদস্য ছিলেন। তখন তিনি ছিলেন নরওয়ের সবচেয়ে কম বয়স্ক মন্ত্রী। এর আগে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে তিনি বিচারপতি কোনাট স্টোরবার্গেট মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। একই সঙ্গে মুসলিম মহিলা পুলিশের কর্মক্ষেত্রে হিজাব পরিধান অনুমোদনের সিদ্ধান্তের ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। শুধু নরওয়ে নয়, ইউরোপজুড়েই ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয়গ্রহীতার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ইসলামের যেই সৌরভ মানুষকে তার দিকে আকৃষ্ট করছে, তা যদি আমরা বাস্তবিকই নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে পারি, তবে আবারও বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে, ইনশাআল্লাহ।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।