শান্তি ও নিরাপত্তার পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হলো ইসলাম। ‘ইসলাম’ শব্দটি ‘সালমুন’ শব্দ থেকে এসেছে। আর এর অর্থ হলো- কোনো কিছু কাউকে অর্পন করা কিংবা দিয়ে দেয়া, নিজেকে কারো কাছে সঁপে দেয়া। কারো কাছে নিজেকে সঁপে দিলে তখন নিজের ইচ্ছা বা খেয়াল-খুশি মতো কোনো কাজ করার সুযোগ থাকে না। যার কাছে নিজেকে অর্পন করা হয়, তার পূর্ণ অনুগত হতে হয়। কুরআনে কারিমে এমনটিই বলা হয়েছে-
‘এবং আসমান এবং জমিনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর কাছে অনুগত হয়েছে, তার বিধি-নিষেধ পালনে প্রস্তুত রয়েছে হোক সন্তুষ্ট চিত্তে কিংবা অসন্তুষ্ট চিত্তে।’
আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে নবি-রাসুলসহ মানুষকে এ পরীক্ষার মুখোমুখি করেছেন। যারা ইসলামের জীবন ব্যবস্থায় বিশ্বাসী তারা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। আর তাহলো-
> একত্ববাদের দাওয়াত দিতে গিয়ে প্রথম জীবনেই নমরূদের অগুনে নিক্ষেপ হতে হয়েছিল তাকে। আল্লাহর একান্ত মহিমায় তিনি আগুনের মধ্যেই পেয়েছিল দুনিয়ার সেরা শান্তি ও নিরাপত্তা।
> বৃদ্ধ বয়সে নিজ সন্তানকে কুরবানি করা অনেক বড় ত্যাগের বিষয়। আর এ পরীক্ষায়ও তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। যখন তিনি স্বপ্নযোগে প্রাণপ্রিয় সন্তান ইসমাইলকে কুরবানির নির্দেশ প্রাপ্ত হন। তখনই তিনি ইসমাইলকে জবেহ করতে উদ্যত হয়েছেন।
আর শিশু ইসমাইলও আল্লাহর হুকুমকে মেনে নিয়ে নিজেকে ইসলামের তলোয়ারে নিচে সঁপে দিয়েছিলেন। আর এভাবেই তারা উভয়ে (পিতা-পুত্র) আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও ইসলামের পূর্ণাঙ্গ অনুসারী হয়ে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করেছিলেন। ইসলাম এমনই এক শান্তি ও নিরাপত্তার জীবন ব্যবস্থা। যা তার নামেই বর্তমান। সুতরাং ইসলামের মূল তত্ত্বই হলো- আল্লাহর আদেশ পালন, পরিপূর্ণ অনুসরণ এবং জীবনের সব কিছুকেই আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিসর্জন দেয়া। মুসলিম উম্মাহর উচিত, জীবনের সব কিছুই তথা শক্তি, যাবতীয় কামনা-বাসনা, আশা-আকাঙ্খা, ভাব-আবেগ এক কথায় সারা জীবনভর মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সব কিছু আল্লাহর কাছে সর্ম্পণ করাই হলো ইসলাম। আল্লাহর নির্দেশও এমন যে মানুষ শারীরিক ও মানসিক শক্তি নিয়ে অবনত মস্তকে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করবে। মহান আল্লাহ ঘোষণা-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের অনুসরণ করো না।’
আল্লাহর এ নির্দেশ অনুসারে মুমিন মুসলমান দুনিয়ার সব সম্পর্ক ছিন্ন করে সব সময় মহান আল্লাহর দরবারে এমনভাবে সেজদায় অবনত হবে , যাতে কখনো তার বিরোধিতা না হয়। নিজের মন ও শরীরের যাবতীয় কুপ্রবৃত্তির প্রতি বিদ্রোহ করে আল্লাহর হুকুম-আহকামের প্রতি আনুগত্যশীল হয়। আর এটাই হলো ইসলামের মূল শিক্ষা। ইসলামের এ শিক্ষা গ্রহণে আল্লাহর সে নির্দেশকে মেনে চলা জরুরি। আল্লাহ বলেন-
‘এবং রাসুল তোমাদেরকে যা গ্রহণ করতে বলেছেন তা গ্রহণ কর আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাকা।’
আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে সঠিক পথের সন্ধানই দিয়ে থাকেন। আল্লাহ বলেন-
‘(হে রাসুল!) আপনি বিশ্ববাসীকে সিরাতুল মুস্তাকিম তথা সরল সঠিক পথ দেখিয়ে থাকেন।’
যারাই আল্লাহর নির্দেশ পালনে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের নসিহতগুলো গ্রহণ করবে তারা দুনিয়া ও পরকালে হবে সফলকাম। আল্লাহ বলেন-
‘তিনিই সেই আল্লাহ, যিনি তাঁর রাসুলকে সত্য জীবন ব্যবস্থা তথা হেদায়েতসহ (দুনিয়াতে) পাঠিয়েছেন। যাতে করে তিনি দুনিয়ার সব জীবন ব্যবস্থার ওপর ইসলামকে বিজয়ী করতে পারেন।’
ইসলামের সুমহান শিক্ষা গ্রহণে কুরআনে বিধান বাস্তবায়ন এবং হাদিসের নির্দেশনা যথাযথ পালনের মাধ্যমেই সম্ভব। যারা এ শিক্ষা গ্রহণ করবে তারাই সফলকাম। সুতরাং ইসলামের সুমহান শিক্ষা নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে ইমাম আবুল হাসান সাজুলি রহমাতুল্লাহি আলাইহি সংক্ষিপ্ত ৫টি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে বলেছেন। আর তাতেই রয়েছে ইসলামের মূল শিক্ষা-
>> প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে তাকওয়া বা পরহেজগারী অবলম্বন করা।
>> সর্বাবস্থায় সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা।
>> জীবনের উন্নতি-অবনতিতে সৃষ্টি হতে নিজেকে বিরত রাখা।
>> আল্লাহর দান কম বা বেশি হোক শোকর-গুজার করা।
>> সুখে-দুঃখে সর্বদা আল্লাহ পাকের প্রতি ধ্যান রাখা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইসলামের সুমহান শিক্ষা নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে উল্লেখিত পাঁচটি বিষয়ের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।