শাবান মাস: রহমত, মাগফিরাত এবং ইবাদতের মাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী- বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২৩শে জানুয়ারী ২০২৫ ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন
শাবান মাস: রহমত, মাগফিরাত এবং ইবাদতের মাস

ইসলামে শাবান মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ একটি মাস। এই মাসে রয়েছে শবে বরাত নামে বিশেষ এক রজনী, যা রমজানের আগমনী বার্তা দেয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে অধিক ইবাদত-বন্দেগি করতেন এবং নফল রোজা রাখার প্রতি গুরুত্ব দিতেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনো শাবান মাসের মতো অন্য কোনো মাসে এত বেশি নফল রোজা পালন করেননি। তিনি বলতেন, রমজানের মর্যাদা রক্ষার জন্য শাবানের রোজা উত্তম।  


নবী করিম (সা.) শাবান মাসকে রমজানের প্রস্তুতির সময় হিসেবে ব্যবহার করতেন। তিনি এই মাসে বেশি বেশি রোজা পালন করতেন যাতে রমজানের দীর্ঘ রোজার জন্য শারীরিক এবং মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া যায়। তিনি বলেছেন, শাবান মাসের রোজা রমজানের জন্য শ্রেষ্ঠ প্রস্তুতি। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলতেন, রমজানের সম্মান প্রদর্শনের জন্য শাবান মাসে বেশি নফল রোজা রাখা উচিত।  


শাবান মাসে একটি বিশেষ রাত আছে, যাকে বলা হয় শবে বরাত। এই রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের আমলনামা তার কাছে উপস্থাপন করেন। তিনি মুমিন বান্দাদের ক্ষমা করেন এবং তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। তবে যারা হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করে এবং আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে তাদের ক্ষমা করা হয় না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই রাতে আল্লাহ বান্দার জন্য বিশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন।  


হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে রাসূলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে চাঁদ দেখার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। তিনি বলতেন, এই মাসে বান্দার সমস্ত কাজ আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করা হয়। তাই এই মাসে বেশি বেশি ইবাদত করার মাধ্যমে বান্দারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। শাবান মাসে বিশেষভাবে নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত এবং দান-সদকা করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।  


নবী করিম (সা.) বলেছেন, যারা শাবান মাসে ইবাদত করবে, তারা রমজানের ইবাদতের জন্য সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে। তিনি বলতেন, রজব হলো আল্লাহর মাস, শাবান হলো আমার মাস এবং রমজান হলো আমার উম্মতের মাস। শাবান মাসের ইবাদত সম্পর্কে তিনি বলতেন, এই মাসে সাধ্যানুযায়ী নেক আমল করা উচিত। যারা শাবান মাসে নফল রোজা রাখেন, তারা রমজানের রোজার জন্য সহজে প্রস্তুত হতে পারেন।  


শাবান মাসে শবে বরাতের রাতে বিশেষ দোয়া এবং ইস্তেগফার করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলতেন, যারা এই রাতে তওবা করে, আল্লাহ তাদের গুনাহ মাফ করেন। শাবান মাসের ইবাদত সম্পর্কে বলা হয়েছে, এই মাসে যারা বেশি বেশি দোয়া করবেন এবং পাপ থেকে মুক্তি চাইবেন, তারা আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভ করবেন।  


মাহে শাবানের ফজিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই মাসের ইবাদত বান্দার আত্মিক প্রশান্তি নিয়ে আসে। এই মাসে যারা ইবাদত করবেন, তারা তাদের জীবনকে পবিত্র করার সুযোগ পাবেন। শাবান মাসের ইবাদত সম্পর্কে তিনি বলতেন, এই মাসে আল্লাহ বান্দাদের আমল কবুল করেন এবং তাদের জন্য জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন।  


শাবান মাস মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ সুযোগ। এই মাসে ইবাদত-বন্দেগি এবং নফল রোজার মাধ্যমে নিজেদের আত্মিক উন্নয়ন সম্ভব। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এই মাসকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে শাবান মাসের ফজিলত বুঝে সঠিকভাবে ইবাদত করার তাওফিক দিন।