বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের আইন-আদালত এখন ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছাপূরণে ব্যবহৃত হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় বিচারের নামে অবিচার চলছে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। দেশের জনগণের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক, গণতন্ত্র ও নাগরিক স্বাধীনতার প্রতীক বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে প্রাণনাশের যাবতীয় আয়োজন চলছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী। তিনি বলেন, নানা তথ্য-প্রমাণ বলছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এ যাবৎ যত মামলা-মোকদ্দমা করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
রিজভী বলেন, বিএনপি ক্ষমতাসীনদের মিথ্যাচারের রাজনীতির শিকার। ক্ষমতাসীনদের প্রতিহিংসার রাজনীতির নির্মম শিকার হয়ে খালেদা জিয়া আজ প্রায় দুই বছর কারাবন্দী। সরকারি ষড়যন্ত্রে তাকে বিনা চিকিৎসায় হত্যা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাকে পিজি হাসপাতালের (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) কারা প্রিজনে রেখে সুচিকিৎসা না দিয়ে পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে। তাকে সম্পূর্ণ অচল করে দেয়া হয়েছে। কোনো কিছুই খেতে পারছেন না তিনি। কিছু মুখে দিলেই বমি হয়ে উঠে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশের কারণে চিকিৎসকদের জরুরি কল দিলেও তারা চিকিৎসা দিতে খালেদা জিয়ার রুমে যাচ্ছেন না। তার শরীর ভেঙে পড়েছে। বাস্তবে তার অবস্থা মরণাপন্ন। এক্ষুণি জরুরি ভিত্তিতে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসা না করালে প্রাণহানির আশঙ্কা করছি আমরা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়াকে পৃথিবী থেকে বাদের খাতায় রাখতে উঠেপড়ে লেগেছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এই মিথ্যা, আজগুবে ও হাস্যকর মামলা শুরু হয় ওয়ান ইলেভেনের ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন অসাংবিধানিক সরকারের সময়ে। সেই দেশ ধ্বংসকারী তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ষড়যন্ত্রের ফসল হিসেবে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা। প্রহসনের নির্বাচনে ক্ষমতায় বসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিজের নামে থাকা ১৫টি মামলা এক ফরমানেই প্রত্যাহার করিয়ে নেন। অথচ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় বিচারের নামে অবিচার চলছে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে। আদালতকে ব্যবহার করে দুটি মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়ার পর আবারও ‘নাইকো দুর্নীতি’ নামে একটি ভুয়া মামলায় বিচারের নামে অবিচারের মহড়া চলছে।
রিজভী বলেন, কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে গ্যাস নিয়ে তৎকালীন বিএনপি সরকার যে চুক্তি করেছিল, সেই চুক্তিতে খালেদা জিয়া দুর্নীতি করেছেন এটা প্রমাণে মরিয়া হয়ে উঠেছে নিশিরাতের সরকার। এ মামলায় খালেদা জিয়াকে ফাঁসানোর জন্য কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে বসানো হয়েছে অস্থায়ী আদালত। দেশে লাখ লাখ মামলা বিচারাধীন থাকলেও শুধুমাত্র খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে এই সরকারের তড়িঘড়ি প্রমাণ করে, তারা আরেকটি ভুয়া অভিযোগে ভুয়া রায় চায়।
তিনি বলেন, নাইকো মামলায় আসলে কোনো দুর্নীতিই হয়নি। ২০১৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি এই রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অফ ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটসের (আইসিএসআইডি) আওতাধীন প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সালিশি ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ে বলা হয়েছে, কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে গ্যাস নিয়ে তৎকালীন বিএনপি সরকার যে চুক্তি করেছিল তাতে কোনো রকমের দুর্নীতি হয়নি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং অন্যদের বিরুদ্ধে এ মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোনো রকমের প্রমাণ বা ভিত্তি নেই। তবে নাইকো মামলার এই রায় যাতে জনগণ জানতে না পারে এ কারণে শেখ হাসিনা সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘আইসিএসআইডি’র ওপর চাপ সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক সালিশ নিষ্পত্তিকারী ট্রাইব্যুনালের রায়ের তথ্য ইচ্ছে করে গোপন রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।