আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করতে ওমর ফারুক চৌধুরীকে ছাড়াই যাবেন যুবলীগ নেতারা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদের নেতৃত্বে সিনিয়র নেতারা গণভবনে যাবেন। বৃহস্পতিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কার্যালয়ে যুবলীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্যাসিনোকাণ্ডে অভিযুক্ত ওমর ফারুক চৌধুরী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের গণভবনে যাওয়া বারণ- প্রধানমন্ত্রী অফিসের এই ম্যাসেজের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুবলীগ।
বৈঠক সূত্র জানায়, জাতীয় সম্মেলনকে (কংগ্রেস) সামনে রেখে রোববার বিকাল ৫টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে যুবলীগ নেতাদের ডাকা হয়েছে। এ সাক্ষাতে কারা কারা যাবেন, কার নেতৃত্বে যাবেন এ বিষয়ে আলোচনা করতেই মূলত বৈঠকে বসে যুবলীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এতে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী, মো. ফারুক হোসেন, মাহবুবুর রহমান হিরন, আবদুস সাত্তার মাসুদ, মো. আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইন, ইঞ্জিনিয়ার নিখিল গুহ, অধ্যাপক এবিএম আমজাদ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কোন নেতারা যাবেন এবং কোন কোন বিষয়ে দিকনির্দেশনা চাওয়া হবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বৃহস্পতিবার বৈঠকে। হারুনুর রশীদের নেতৃত্বে প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন- এ মর্মে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। তবে যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের বাইরে কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যদেরও নেয়া যায় কিনা- সে ব্যাপারেও সাধারণ সম্পাদকের কাছে প্রস্তাব এসেছে। তবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সূত্র আরও জানায়, যুবলীগে যাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের ছাড়াই কংগ্রেসের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও সংগঠনের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। এমনকি জাতীয় কংগ্রেস আয়োজনের সব কার্যক্রম থেকেও তাদের দূরে রাখার বিষয়ে আলোচনা হয় গতকালের বৈঠকে।
এদিকে ওমর ফারুক চৌধুরীর গণভবনে যেতে বারণ আছে কিনা এ বিষয়ে আজ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, যুবলীগ নিয়ে গণভবনে বৈঠক ডেকেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুবলীগের চেয়ারম্যানকে কেন ডাকা হয়নি, কোন বয়স পর্যন্ত যুবলীগ করা যাবে, সেসব আলোচনা রোববারই করা হবে।
যুবলীগ চেয়ারম্যানের গণভবনে যাওয়া নিষেধ, তা হলে কি কার্যত তিনি অপসারিত হয়েছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, গণভবনে এই মিটিং ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে কাকে ডাকবেন আর কাকে ডাকবেন না, সেটি প্রধানমন্ত্রীর বিষয়। এটি পার্টি অফিসে ডাকা হলে আমি বলতে পারতাম। আওয়ামী লীগ সভাপতি যুবলীগকে গণভবনে ডেকেছেন। সেখান থেকে যাদের বলা হয়েছে, তারাই মিটিংয়ে যাবেন। যুবলীগকে বয়স কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোববারের মিটিংয়ে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
সম্প্রতি যুবলীগের বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা ও টেন্ডারবাজির অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পর থেকে সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর নামও উঠে আসে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার করা হয় যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ নেতা জিকে শামীমসহ অনেকেই। যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সম্পৃক্ততাও বেরিয়ে আসে। তার আলোকে ইতিমধ্যে ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করা ছাড়াও তার বিদেশ যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর পর থেকেই আড়ালে চলে যান ওমর ফারুক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাকে ছাড়াই সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন সংগঠনটি। গত শুক্রবার তাকে ছাড়াই হয়েছে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সভা।
ওই সভায় সম্মেলনের আয়োজন নিয়ে আলোচনা করা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা নিয়েও আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, যুবলীগের সম্মেলন সামনে রেখে এ সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকেই নেয়া হবে। সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ‘আবেদন’ জানান নেতারা। বুধবার গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কণফারেন্সে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ওই অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে কথা বলেন হারুনুর রশীদ। যুবলীগ নেতাদের সাক্ষাতের দিন রোববার ঠিক করা হয়। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন যে গণভবনে যুবলীগের সঙ্গে রোববারের বৈঠকে ওমর ফারুক চৌধুরী ও নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন না থাকুক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ বুধবার রাতে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের রোববার দেখা করার সময় দিয়েছেন। তবে ওমর ফারুক চৌধুরী ও নুরুন্নবী শাওনকে না রাখার বিষয়ে কোনো নির্দেশনার কথা আমাকে বলেননি। তবে আমার ধারণা, চেয়ারম্যান মহোদয় সম্ভবত যাবেন না। কারণ বেশ কিছু দিন হলো তিনি সংগঠনের কার্যক্রম থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন। এ বিষয়ে জানতে ওমর ফারুক চৌধুরীকে তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।