প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৮
বহুল আলোচিত জুলাই সনদ অবশেষে স্বাক্ষরিত হলেও এতে অংশ নেয়নি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম মুখ্য শক্তি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন না। এতে রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে নানা বিশ্লেষণ ও জল্পনা। এনসিপির এই সিদ্ধান্তের পেছনে কী কারণ, তা পরিষ্কার করেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদের কোনো আইনি ভিত্তি না থাকায় এবং বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা না দেখানোয় তারা অনুষ্ঠানে যাননি। তার দাবি, কেবল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে নয়, জনগণের বাস্তব অধিকার নিশ্চিতের জন্য আইনি কাঠামো অপরিহার্য।
আখতার হোসেন আরও বলেন, এনসিপি গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পক্ষে, কিন্তু সেই রূপান্তর যেন স্থায়ী হয়, সে জন্য দরকার সাংবিধানিক সুরক্ষা। আইন ও কাঠামো ছাড়া কোনো চুক্তি কাগজে সীমাবদ্ধ থেকে যায়। তাই তারা জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন কাঠামো না দেখা পর্যন্ত স্বাক্ষর করবে না।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ সিনিয়র নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, দলটি জুলাই সনদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সমর্থন করলেও এর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাদের মতে, সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা স্পষ্ট না হলে তা জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে না।
দলটির পক্ষ থেকে জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলার নিন্দা জানানো হয়। আখতার হোসেন বলেন, “জুলাই বিপ্লবের মূল শক্তি ছিল জনগণ, সেই জনগণের ওপর হামলা মানে গণতন্ত্রের ওপর হামলা।” তিনি হামলার দ্রুত বিচার দাবি করেন এবং বলেন, ন্যায়ের পথে থেকে রাজনৈতিক পরিবর্তনের লড়াই অব্যাহত থাকবে।
এর আগে শুক্রবার এনসিপি এক বিবৃতিতে জানায়, জুলাই সনদকে তারা শুধুমাত্র রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল হিসেবে দেখে না। বরং এটি গণতন্ত্র পুনর্গঠনের ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করে। তাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি স্পষ্ট হওয়াটাই এখন সবচেয়ে জরুরি।
এনসিপি মনে করে, জুলাই সনদের প্রধান কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের স্বৈরতান্ত্রিক ভিত্তি ভেঙে দিয়ে গণতান্ত্রিক কাঠামো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্যে সনদের বাস্তবায়ন আদেশ ও প্রক্রিয়া সঠিকভাবে প্রণয়ন না হলে তারা স্বাক্ষর করবে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপির এই অবস্থান জুলাই পরবর্তী জাতীয় রাজনীতিতে নতুন ভারসাম্য তৈরি করতে পারে। দলটি এখনো আলোচনার দরজা খোলা রেখেছে, তবে তাদের মূল লক্ষ্য আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি নিশ্চিত করা।