প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ২০:১৫
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক দেশের রাজনীতিতে কিছু জটিলতা নিরসনে ভূমিকা রাখলেও এই বৈঠক ঘিরে নতুন করে অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, এই বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যা সুস্থ রাজনীতির জন্য যথেষ্ট উদ্বেগজনক। বিশেষত, বৈঠকে দুই পক্ষের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলেও পরে দুই নেতার একান্ত বৈঠক জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। তিনি মনে করেন, একান্ত বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে এবং কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা জাতির সামনে স্পষ্ট করা উচিত।
পুরানা পল্টনে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় এসব মন্তব্য করেন চরমোনাই পীর। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি বহুদলীয়। অতীতের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বিভিন্ন দলের অবদান রয়েছে, তাই ভবিষ্যতের রাষ্ট্র গঠনে সব দলের প্রতি সমান মর্যাদা থাকা জরুরি। কিন্তু লন্ডন বৈঠকের যে চরিত্র ফুটে উঠেছে, তাতে অনেক রাজনৈতিক দল নিজেদের অবমূল্যায়িত মনে করছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ঈদের আগের দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে যে নির্বাচনকালীন সময়সূচি ঘোষণা করেছিলেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত থাকলেও সেই মতামত উপেক্ষিত হয়েছে। এর মধ্যেই লন্ডন বৈঠকের পরে একান্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে সময়সূচি পুনর্বিবেচনার যৌথ বার্তা নতুন করে রাজনীতিকে অস্বস্তিকর অবস্থানে নিয়ে গেছে।
চরমোনাই পীর বলেন, এই পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে স্বচ্ছতা ও জাতীয় স্বার্থে ঐক্য জরুরি। তিনি সরকারকে আহ্বান জানান যেন নির্বাচনের আগে মৌলিক রাজনৈতিক সংস্কার ও অতীত ফ্যাসিবাদের বিচার নিশ্চিত করা হয়। নির্বাচনের নামে যেন কোনো পক্ষ এই দাবিগুলো ধামাচাপা দিতে না পারে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচনে আপনাদের প্রত্যাশা যদি পূরণ হয়ে থাকে, তাহলে এখন সময় এসেছে দেশে স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখার। ইসলামী আন্দোলনের প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংস্কার কমিশনের বিষয়ে বিএনপির সমর্থন প্রত্যাশা করছি।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন ও সংসদীয় কমিটিতে বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার মতো প্রস্তাবগুলো এখন সময়োপযোগী। এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতের রাজনীতিকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান। তারা সবাই ঐক্যমতের ভিত্তিতে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক কাঠামোতে সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
চরমোনাই পীরের এই বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করছেন, লন্ডন বৈঠকের পরে রাজনীতির দৃশ্যপট কিছুটা বদলাতে পারে এবং নতুন সংলাপের দরজা খুলে যেতে পারে।