আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে প্রথম ১৮ মাসে ১ কোটি কর্মসংস্থান তৈরির অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ভোরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘১ ট্রিলিয়ন ডলার ইকোনমি’ শিরোনামে একটি স্ট্যাটাসে এই প্রতিশ্রুতি দেন।
স্ট্যাটাসে মির্জা ফখরুল লেখেন, বিএনপির লক্ষ্য ২০৩৪ সালের মধ্যে দেশের জিডিপি ১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা। তিনি জানান, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিএনপি একগুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বৃদ্ধি ও কর ব্যবস্থায় সংস্কার। বর্তমানে জিডিপির তুলনায় মাত্র ০.৪৫ শতাংশ এফডিআই রয়েছে, যা আগামীতে ২.৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়েছে দলটি।
বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে বিএনপি ১১টি নীতিগত ও বিধিবদ্ধ সংস্কারের প্রস্তাব করেছে, যার মধ্যে আটটি প্রধান পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছেন মির্জা ফখরুল। এগুলোর মধ্যে রয়েছে— বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা) অধিক কার্যকর করা, বিনিয়োগকারীদের জন্য ২৪x৭ সেবা চালু, মুনাফা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় করা, ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট নীতিমালার আধুনিকীকরণ এবং বিনিয়োগ নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন।
এছাড়া দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানের আওতা ও পরিমাণ বাড়ানোর দিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। দলটি বিশ্বাস করে, দেশের মানবসম্পদই দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে।
মির্জা ফখরুল আরও জানান, জনগণের ঘাড়ে বাড়তি করের বোঝা চাপিয়ে নয়, বরং কর আহরণ ব্যবস্থাকে সহজ, স্বচ্ছ ও উদ্বুদ্ধমূলক করে রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। কর নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ভীতি ও অনীহা রয়েছে, তা দূর করে অংশগ্রহণমূলক কর সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চায় দলটি।
স্ট্যাটাসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিনিয়োগ সম্মেলন উপলক্ষে দেওয়া বার্তারও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। বার্তায় তারেক রহমান বলেন, “ঐক্যই ভবিষ্যৎ জাতীয় উন্নয়নের সোপান। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় এফডিআই আকৃষ্ট করতে যে আইন প্রণয়ন হয়েছিল, তা ছিল একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। পরবর্তীতে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াও বিনিয়োগবান্ধব নীতির মাধ্যমে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।”
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে ‘বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫’-এ বিএনপির এই পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। দলটি আশা করছে, জনগণ তাদের এই উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এক কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি ও ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি গঠনের পরিকল্পনা রাজনৈতিক মাঠে নতুন আলোচনার সৃষ্টি করবে। এটি যদি বাস্তবায়নযোগ্য রূপ পায়, তবে তা দেশের অর্থনৈতিক চিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।