আসন্ন বরিশাল সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ গরম করছেন মেয়র প্রার্থীরা। প্রায় প্রত্যেক প্রার্থী বলছেন, গত এক দশকে নগরবাসী উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল। এমনকি বঞ্চনার শিকার হয়েছেন নগরবাসী। এ বিষয়টিকে সামনে রেখেই ১২ জুনের নির্বাচনে ভোট চেয়ে দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতি। প্রচারণার ক্ষেত্রে বঞ্চনার বিষয়টি বেশি তুলে ধরছেন আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই নগরবাসীর কাঙ্খিত সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এ প্রার্থী। এদিকে জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙলের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই ইভিএম-এ ভোট গ্রহণ না করার আহবান জানিয়েছেন। পাশাপাশি এ প্রার্থীও দাবী করছে গত ৫ বছরে নগরবাসীকে অনেক বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই নগরবাসী এবার লাঙল মার্কায় ভোট দিবেন এমন প্রত্যাশা তার। অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখার প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে ও সমাজের সব জায়গায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য হাতপাখায় ভোট প্রার্থনা করছেন। এছাড়া স্বতন্ত প্রার্থীরা নির্বাচনের মাঠে না নামলেও ঘরোয়া বৈঠকে উন্নয়নের কথা বলছেন।
আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই দলীয় নেতাকর্মী, বিভিন্ন সংগঠন আর মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত মতবিনিময়, সৌজন্য সাক্ষাত আর কুশল বিনিময়ের মধ্য দিয়ে নৌকার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন খোকন সেরনিয়াবাত। এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটি প্রতিষ্ঠান। ফিরিয়ে আনা হবে কর্পোরেশনের সেবার পরিবেশ। গত দশ বছরেও বরিশালবাসী কোন মানবিক সেবা পায়নি। উল্টো বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। তাই জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সেবা করার জন্য পাঠিয়েছেন। আমি নির্বাচিত হতে পারলে ১২ জুনের পর এটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সবার মতামতেই চলবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। সবার সহযোগীতায় আমরা সেই লক্ষ্যে পৌছাবোই। আমরা গড়বো নতুন বরিশাল। এখানে দল মত নির্বিশেষে সকলের কাছে আবেদন আমি যাতে সেই কাংখিত সেবা দিতে পারি আগামী ১২ জুন আমাকে নির্বাচিত করার মাধ্যমে সুযোগ তৈরী করে দিবেন। নির্বাচিত হলে এখানের সকল সমস্যা মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।
জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাধারণ ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময়, দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। লাঙল মার্কার এ প্রার্থী শুরু থেকেই বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ না করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি বরিশাল সিটি নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছেন এ মেয়র প্রার্থী। সম্প্রতি তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, বরিশালে দখলবাজির নগ্ন উৎসব চলছে। আগে ভাতিজার আমলের মাছবাজার, লঞ্চ ঘাট, স্পীডবোড ঘাট, বাসস্ট্যান্ড চাচার বাহিনী নমিনেশন পাওয়ার পর দখল করে নিয়েছে। বিগত ৫ বছর দিনের অফিস রাতে বাসভবনে করেছে আগামীতে কোথায় অফিস করবেন তা সময় বলে দেবে। তিনি বলেন, গত ৫ বছরের দুঃশাসনের কথা মানুষ ভুলতে পারেনি, নতুন করে হুন্ডা আর গুন্ডা বহিনীর তান্ডব শুরু হয়েছে। আমরা দুঃশাসন থেকে মুক্তি চাই। আগামী ২৬ মের পর ঘরে ঘরে লাঙ্গল মার্কা পৌঁছে দিতে নেতাকর্মীদের আহবান জানান তিনি। এ সময় নির্বাচন কমিশনার ও সরকারকে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করারও আহবান জানান।
এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখার মেয়র প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। তবে সম্প্রতি তিনি গুটি কয়েক সংবাদকর্মীকে নিয়ে রাতের বেলা মতবিনিময় করেন। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে। গতকাল ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল মহানগর শাখার আয়োজনে ওয়ার্ড প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়া পরবর্তী যে সকল নীতির ভিত্তিতে দেশ পরিচালিত হয়েছে সে সকল নীতি দেশে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। দেশে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে ইসলামের বিকল্প কোন আদর্শ নাই। ইসলামের ভিত্তিতে দেশ পরিচালিত হলে দেশের মানুষ ন্যায্য অধিকার পাবে, গরীবের মুখে হাসি ফুটবে, দুর্নীতির মূলোৎপাটন হবে ও সমাজের সব জায়গায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে। তিনি বলেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হলে বরিশালে গরীব, দুঃখী ও মেহনতি মানুষ তাদের নাগরিক অধিকার পূর্ণাঙ্গ ভোগ করতে পারবে। শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা বান্ধব নগরী গড়ে তোলা হবে। দুর্নীতি ও দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে বরিশালকে একটা শান্তির নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
অপরদিকে নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেননি দাবী করে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রুপন বলেন, স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের নিয়ে তিনি ঘরোয়া বৈঠক করছেন। আগামী ২৬ মে প্রতীক বরাদ্দের পরই মূলত আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, বরিশাল নগরবাসী বিগত সাড়ে ৪ বছরের দুঃশাসন দেখেছেন। বরিশালকে সিঙ্গাপুর বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে উল্টো ভোগান্তির নগরী করেছেন মেয়র। নির্বাচিত হতে পারলে ওয়ার্ড ভিত্তিক গণ্যমান্য ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের পরামর্শ নিয়েই নগরবাসীর উন্নয়নে কাজ করবেন বলে জানান স্বতন্ত্র এ প্রার্থী।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।