প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২১, ২২:১৪
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
হেফাজত আমিরের পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন নারায়নগঞ্জের বহুল আলোচিত ডিআইটি মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল আউয়াল।
সোমবার রাতে মসজিদে শবে বরাতের বয়ান দেয়ার সময় তিনি এ ঘোষণা দেন। এ সময় মাওলানা আবদুল আউয়াল বলেন, হেফাজতের নেতৃত্বে নয়, একজন কর্মী হিসেবে থাকবেন।
হরতাল ইস্যুতে মহানগর নেতাদের অতি বাড়াবাড়ি ও পরদিন দোয়া মাহফিল ভিন্নস্থানে করার অভিযোগ এনে আমিরের পদে থাকতে অনীহা প্রকাশ করেছেন তিনি।
শবে বরাতের বয়ানে তিনি বলেন, ‘২৮ মার্চ রোববার হরতালের দিন সকালে মসজিদে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছুটে আসেন। ফজরের পর থেকে মসজিদের গেটের সামনে তিনটি কামান, সাজোয়া যান পুলিশের গাড়ি দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে রাখেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন মিছিল বের করতে চাইলে অ্যাকশনে যাবেন। প্রয়োজনে গুলি খাবেন। তখন আমি সবার জানমালের স্বার্থে মসজিদের গেটের বাইরে যেতে বারণ করি। কারণ আমাদের তো অস্ত্র নাই’।
তিনি বলন, ‘যদিও অনেক আবদার করেছি, চেষ্টা করেছি, কিন্ত মসজিদ থেকে বের হতে পারি নাই। বের হতে দেয় নাই। এখন শুনতেছি চিটাগং রোডে ১৭টি গাড়ি পুড়ছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় সন্ত্রাসী লোকজন পুড়েছে। আমাদের ছাত্ররা পুড়ে নাই। এখন তারা বলতেছে, আপনি যদি আমাদের কথা না মানতেন তাহলে ১৭টি গাড়ি পোড়ানোর মামলায় এক নাম্বার আসামি হতেন আপনি। আমরা যাব কোথায়? তারাও আমাদের বুঝতে চায় না, আমাদের অতি উৎসাহী লোকজনও বুঝে না’।
‘ওদিকে যারা বলতেছে হুজুরের কমান্ড ভেঙে তারা গেলো না কেন? আমি বলছি, আল্লাহর ওয়াস্তে আমি আর তোমাদের হেফাজতের দল করব না। আমি মসজিদে থাকব। ভবিষ্যতে আর নেতৃত্ব দেব না। মসজিদ-মাদ্রাসা নিয়েই থাকব। সরাসরি নেতৃত্বে আর যাব না, যাব না, যাব না’।
তিনি বলেন, ‘আমি একবার নিষেধ করেছি। তোমরা যারা অতি উৎসাহীওয়ালা আছ, তোমরা করো। আমার এখন বার্ধক্য বয়স। অসুস্থ মানুষ, হাঁটতে পানি না, দাঁড়াতে পারি না। এখন কথাও ঠিকমত বলতে পারি না। আমি আর হেফাজতের নেতৃত্ব দেব না। আন্দোলনের নেতৃত্ব না, আমি কর্মী হিসেবে যতদিন বেঁচে থাকি, থাকব। নেতৃত্বের মধ্যে নাই। সরাসরি জানিয়ে দিতেছি। সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা দেব, আমি আর হেফাজতের নেতৃত্বে নাই’। ‘এবং তারা আমার এই কথাগুলোতে উপেক্ষা করে আজকে (সোমবার, ২৯ মার্চ) আছর নামাজের পর দোয়ার কথা ছিল এখানে (ডিআইটি মসজিদ)।
তারা এখানে না করে দেওভোগ মাদ্রাসায় দোয়া করেছে। তাহলে অটোমেটিক আমাকে সাইড করে দিয়েছে। তারা বলে এমন নেতা (আব্দুল আউয়াল) দিয়ে চলবে না। আমি নেতৃত্ব ছেড়ে দিলাম। আমি আর নেতৃত্ব দিয়ে কাজ করব না। আমি ইস্তফা দিয়ে দেব। আমার আমিরের পদ দরকার নাই। একজন সাধারণ মুসলমান হিসেবে যতদিন বেঁচে থাকি ততদিন হেফাজতের কর্মী হিসেবে থাকব। আমি আর ডাকব না, অন্যান্য যারা আছে তারা ডাকবে আপনারা তাদের ডাকে আসবেন’।
মাওলানা আউয়াল বলেন, ‘তারা আমাকে মাইনাস করে বলতেছে, কেন আমি ব্যারিকেড ভেঙে তাদের নিয়ে মসজিদ থেকে বের হলাম না। যদি রোববার আমি ব্যারিকেড ভেঙে বের হতাম, তাহলে আজকে দেখতেন ডিআইটি মসজিদ ভেঙে ঝরঝরা হয়ে গেছে। যখন গোলগুলি শুরু হতো, তাহলে এখানে লাশ পড়ে যেত কয়েকটা। আর ডিআইটি মসজিদের গ্লাস একটাও থাকত না। তখন আইভীও (মেয়র) বলত, অন্যরাও বলত, আব্দুল আউয়ালকে সরাতে হবে। এখানে তাকে রাখা যাবে না। তার কারণে মসজিদ আক্রান্ত হয়েছে। সে এখানে থেকে গণ্ডগোল করে। যদি লাশ পড়তো। আপনারা লাশের পক্ষ নিয়ে বলতে এটা কোন নেতৃত্ব? কে নেতৃত্ব দিয়েছে মায়ের বুক খালি কইরা। তোমাকে কে নেতৃত্ব দিতে বলছে’।
‘ওই সময় আপনারা সব এই কথা বলতেন। এখন আমি কোন দিকে যাব? এখন আমার একটাই রাস্তা আমি জিম্মাদার ছেড়ে দিলাম। তোমরা যে কোনো একজন জিম্মাদারীর কাজ করো। আমার পক্ষ থেকে আর কোনো ঘোষণা আসবে না। ব্যক্তিগত কাজে যদি কাউকে ডাকি, সেটা সংগঠনের পক্ষ থেকে না। সরাসরি দেশবাসীকে তা জানিয়ে দিলাম। এবং সাংবাদিক সম্মেলন করে পদত্যাগ করব। যারা জোয়ান আছে, যুবক আছে তাদের নেতৃত্ব দিয়ে কাজ করো। আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব’।
রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড, সানারপাড়, মাদানীনগর, শিমরাইল উত্তপ্ত থাকলেও নারায়ণগঞ্জ শহর ছিল একেবারে শান্ত। ভোর থেকে শহরের ডিআইটি জামে মসজিদের সামনে হেফাজত নেতারা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তবে বেলা সাড়ে ১০টার পর থেকে একে একে নেতাকর্মীরা চলে যান। শহরের ডিআইটি এলাকায় ভোর থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা রেলওয়ে ডিআইটি মসজিদের ভেতরে অবস্থান নেন।
ভোর থেকেই ডিআইটি মসজিদে পুলিশ, বিডিআরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘিরে রাখে। সকাল ৭টার দিকে পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যেই হেফাজতের নেতাকর্মীরা মসজিদের বারান্দা ও আঙ্গিনার মধ্যে হরতালের পক্ষে স্লোগান দেন।
পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মসজিদে ঢুকে হেফাজতের জেলার সভাপতি মাওলানা আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে কথা বলেন। পরে মসজিদের ভেতরে কিছু নেতাকর্মী অবস্থান নেন এবং বাকিরা বের হয়ে বাড়ি ফিরে যান। সূত্র: দেশ রূপান্তর