প্রকাশ: ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪৪
আজ ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭৮ সালের এই দিনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএনপি চারবার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্য রেখেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় বিএনপির ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার তিন বছর পর জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রমনা রেস্তোরাঁয় বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো ঘোষণা করেন। তার প্রতিষ্ঠিত দল পরের বছরই সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাজনৈতিক দৃঢ় অবস্থান তৈরি করে। এই উনিশ দফা কর্মসূচি বিএনপিকে শক্তিশালী করে এবং দেশের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমান দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। তাই জনগণ তাঁকে সমর্থন করে দেশব্যাপী গ্রহণ করেছে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে বিপথগামী সেনা সদস্যদের হাতে জিয়াউর রহমান নিহত হলে দলের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেন বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর নেতৃত্বে তিনবার সরকার গঠন করে বিএনপি দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২০০৭ সালের জরুরি অবস্থার পর বিএনপি কঠিন রাজনৈতিক সংকটে পড়ে। টানা দেড় দশক আওয়ামী লীগের দমন-পীড়নের মুখে রাজনীতির মাঠে দলটি সঙ্কুচিত অবস্থায় থাকে। মিথ্যা মামলার কারণে দুই বছর কারাগারে থাকতে হয় খালেদা জিয়াকে। নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেলেও অসুস্থতা ও আইনী জটিলতার কারণে তিনি রাজনৈতিক কার্যক্রমে সীমিত ছিলেন।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর বিএনপি নেতা-কর্মীরা নতুন উদ্দীপনা লাভ করেছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার অপেক্ষায় পুরো দল সক্রিয় হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলকে সত্যিকারের উদার ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। অতীতে যেমন মানুষের কাছে সমাদৃত ছিল, ভবিষ্যতেও সেই সম্মান অর্জন করতে দলের নেতা-কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করবেন।
আসন্ন নির্বাচনে জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার লক্ষ্য রাখছে। দলের নেতা-কর্মীরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছেন, সংগঠনের ঐক্য ও জনগণের আস্থা ফিরে পাওয়ার মাধ্যমে দেশকে পুনরায় একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তর করা সম্ভব।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রাক্কালে সাত দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ৩১ আগস্ট রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আজ সকাল ৬টায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরের দলীয় কার্যালয়ে পতাকা উত্তোলন করা হবে।
দুপুরে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা এতে অংশ নেবেন। ২ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হবে। ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা ও পৌরসভায় আলোচনা সভা ও র্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে এবং পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৃক্ষ রোপণ অভিযান, মৎস্য অবমুক্তকরণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প এবং ক্রীড়ানুষ্ঠানের মাধ্যমে দলের কর্মসূচি সমাপ্ত হবে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা বিশ্বাস করছেন, এ ধরনের কার্যক্রম তাদের সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করবে এবং দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।