রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, "ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হাজারও শহিদের রক্তের বিনিময়ে লাখো কোটি জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফসল। এই সরকারের কোন কার্যক্রম সবার কাছে সাফল্য হিসেবে বিবেচিত নাও হতে পারে, তবে এর ব্যর্থতা হবে আমাদের সবার ব্যর্থতা, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা।"
তারেক রহমানের মতে, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, "দেশ-বিদেশ থেকে নানা রকমের উস্কানির পরও জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেবে না। তবে, সরকারকেও সতর্ক থাকতে হবে যাতে তারা নিজেদের ব্যর্থতার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।"
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমাবেশে যুক্ত হয়ে তারেক রহমান বলেন, "বিএনপি ২০২৩ সালে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। তবে এই ৩১ দফাই শেষ কথা নয়। সংস্কার কার্যক্রম একটি ধারাবাহিক এবং চলমান প্রক্রিয়া। তাই, রাষ্ট্র ও রাজনীতি সংস্কারে আরো প্রয়োজনীয় পরিবর্তন পরিমার্জনকেও BNP স্বাগত জানায়।"
তারেক রহমান বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারকে কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, "লাখো শহীদের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার কথা ছিল গভর্নমেন্ট অফ দ্য পিপল বাই দ্য ফর দ্য পিপল। অথচ গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে মাফিয়া শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ব্যাংকগুলো দেউলিয়া করে দেওয়া হয়েছে এবং ১৭ লক্ষ কোটি টাকার বেশি পাচার করা হয়েছে।"
তিনি উল্লেখ করেন, "৫ আগস্টের পতিত স্বৈরাচারের দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ বর্তমানে ১০০ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। আজ যে শিশুটি জন্ম নিয়েছে, তার মাথা পিছু ঋণ কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা।"
তারেক রহমান সরকারের সমালোচনা করে বলেন, "হাসিনা সরকার রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে ফেলেছে। মাফিয়া চক্র দেশকে শুধু অর্থনৈতিকভাবেই ভঙ্গুর করেনি, দেশের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক রীতিনীতিও ধ্বংস করে ফেলেছে। প্রতিটি সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে।"
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার বক্তৃতায় বলেন, "মাফিয়া শাসনের অবসান ঘটেছে, কিন্তু মাফিয়া চক্রের রেখে যাওয়া ১৫ বছরের জঞ্জাল এখনও দূর হয়নি। এই জঞ্জাল দূর করে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছে।"
তারেক রহমান আরো বলেন, "এই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার অবশ্যই জনগণের সরকার। জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে এবং রাখবে। তবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহি নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা হয়।"
তারেক রহমান বলেছেন, "নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে 'সক্ষম এবং উপযুক্ত' করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিএনপি মনে করে, যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয় তবে গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য ব্যাহত হতে পারে।"
তিনি আরো যোগ করেন, "এবারের গণঅভ্যুত্থান অতীতের যে কোনো গণঅভ্যুত্থানের চেয়ে ব্যতিক্রম। পলাতক স্বৈরাচারের অবৈধ শাসনকালে জনগণের অধিকার এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন ছিল। এবারের গণঅভ্যুত্থান জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছে।"
তারেক রহমান বলেন, "বর্তমানে প্রায় সাড়ে বারো কোটি ভোটার রয়েছে, এর মধ্যে ২০০৯ সাল থেকে ভোটার তালিকায় প্রায় আড়াই কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। তাদের অধিকাংশই ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি। বিএনপি মনে করে, তরুণ প্রজন্ম এবং নারীদের রাজনৈতিক অংশীদারিত্ব ছাড়া একটি বৈষম্যহীন মানবিক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়।"
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এবং বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, এবং অন্যান্য নেতারা। সমাবেশে বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এই সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি তাদের নতুন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সরকারের প্রতি দায়িত্বশীলতার দাবি আরো একবার প্রকাশ করল, এবং জনগণের সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানাল।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।