বিচিত্র জীবনে, কায়দা করে বাঁচা? নাকি আত্মহত্যা?

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: বুধবার ১লা জুলাই ২০২০ ০৪:৪০ অপরাহ্ন
বিচিত্র জীবনে, কায়দা করে বাঁচা? নাকি আত্মহত্যা?

ব'ল না কাতর স্বরে, বৃথা জন্ম এ সংসারে
এ জীবন নিশার স্বপন;
দারা পুত্র পরিবার তুমি কার, কে তোমার,
ব'লে জীব ক'রো না ক্রন্দন।

জীবনসঙ্গীত কবিতায় কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এভাবেই শুরু করেছিলেন।শুরুতেই শ্রদ্ধার সাথে চরণগুলো স্মরণ করলাম।চোখ বন্ধ করে চিন্তা করি, ভাবনার বিষয় মানবজীবন পাশাপাশি মানবজীবনের বিভিন্ন ধাপ তারই উদরপূর্ণ সংকটসমূহ।যার মাঝে বিষ্ণুপ্রিয়া বর্তমান প্রেক্ষাপট। ভেতর থেকে বলে উঠি "ওরে প্রাণের বাসনা, প্রাণের আবেগ রুধিয়া রাখিতে নারি।" 

সামাজিক জীব মানুষ। সমাজেই তাকে বাস করতে হবে। একাকী বসবাস স্বাভাবিক মানুষের পর্যায়ে নেই বললেই চলে। একা এক ঘরে বাস করতে গেলেও সহায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেখানে অন্য মানুষের উপস্থিতি পাওয়া যায়। মোটকথা, মানুষের জন্য মানুষকেই চাই। তেমনই দরকারে মানুষ মানুষকে সাহায্য করবে এটাই কর্তব্য। এমন শিক্ষাই তো কবি কামিনী রায় দিয়েছেন " সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।"অমর সেই শিক্ষার অটুট গাম্ভীর্য হয়তোবা বজায় নেই,তবুও কর্মযজ্ঞের জীবনে ক্ষণিকের দেখা পেতেও পারি। পাচ্ছিও। 

জীবনে সুখ, সম্মৃদ্ধি থাকাটাই কামনার, বাসনার। মানুষ নিজ থেকে তার কষ্ট দুর্দশা কামনা করেনা। তবুও কখনও কখনও পোহাতে হয়। হয়তো অনিচ্ছায় কিংবা বাধ্য হয়েই। রীতিমতো অত্যাচার নিজের স্বাধীন মননের সাথে, যুদ্ধ মস্তিষ্কের সাথে, সংগ্রাম দেহের প্রতিটি পর্যায়ের মাঝে। মহাযুদ্ধ দেহে বয়ে চলা রক্তবিন্দুর একে অপরের সাথে!খুব কঠিন সেই সময়, যা কি না মানুষ খারাপ স্বপ্ন হিসেবেও আশা করেনা। 

জন্ম থেকেই মানুষ নবজাতকের খেতাম পাই আমরা। কান্নার মাঝেই আগমন তবে বাকিসবার মুখে এক তৃপ্তির হাসি। সময় চলতে থাকে, হাজির হয় জীবনে নানা পর্যায়। শৈশব, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব অতঃপর বৃদ্ধের জীবন। বিদায়ের অপেক্ষা। কারণ, "জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে? " ধর্মের বিধান, " সকল প্রাণি ই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে " মানুষের জীবন একদিন শেষ হবেই। প্রকৃতির নিয়মে আমি আপনি আমাদের চারপাশের মানুষ যারা আছেন কেউই এই পৃথিবীতে থাকবোনা। এটা বাস্তব নির্মম সত্য।

ক্ষণিকের জীবনে তাই বলে সকল কিছু ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়। যেটুকু সময় বাঁচতে সুযোগ আছে, বাঁচা যেন বাঁচার মতোই হয়। তবুও সংকট মেনে নিতে হবে। "চোখে ধূলা পরলে পানির ঝাপটায় চোখ পরিষ্কার করে নিতে হয়, চোখ তুলে ফেলতে নয়। "চারিদিকে সংকট, হতাশা, কষ্ট, বেদনা। যার সবকিছু আছে বলে বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হয়, সেই ব্যক্তিটিও হয়তো কোনো এক না পাওয়ার যন্ত্রণা নিয়ে ঘোরে৷ জগতে সুখী মানুষ হয়তো সে ই, যার কোনো চাওয়া নেই, আশা নেই।কিন্তু তা তো প্রায় অসম্ভব। বলছি হতাশাগ্রস্ত সমাজের সেই মানুষগুলোর কথা'। 

যাদের জন্ম আপনার আমার মতোই আপ্লুত মানুষ হিসেবে। কিন্তু সময়ের ধারাবাহিকতায় সেই মানুষটি আজ অন্ধকারে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে ভালোবাসে। হয়তো বিদায় নিতে চায় দুনিয়া থেকে। ভেবে নেয় হয়তো মৃত্যুই তার মুক্তির পথ। 

কিন্তু কেন? মরতে তো হবেই। নিজেকে শেষ করে দেয়া কেন? যখন তখন? বর্ণ, শব্দ, বাক্য হয়তো সেই আবেদন হারিয়েছে!তাই প্রকাশের মাঝে সমাধান আশা করা যায়না। তাই লুকিয়ে বাঁচতে চেয়েও মৃত্যুকে বেছে নিতে হয়। আত্মহত্যার বিষয়ে বড় বড় লেখনি অনেক আছে। সাইকোলজির বিভিন্ন অধ্যায়ে বিরাট বিরাট ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিবর্গ। তবুও কেন? থামাতে পারছিনা? হয়তো কোনো একটা বড় জায়গায় অভাব রয়ে গেছে। যা শুধুমাত্র মরণ কে বেছে নেওয়া ব্যক্তিটিই জানে। 

সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বড় খেতাবে ভূষিত ব্যক্তিবর্গও আত্মহত্যা বেছে নেয়।প্রেমঘটিত কারণে, পারিবারিক কলহ, পরীক্ষায় ফলাফল আশানুরূপ না হওয়া, কর্মক্ষেত্রে কিংবা ব্যবসায় লোকসান, ঋণের বোঝা সহ নানাবিধ কারণে মানুষ আত্মহত্যা করেছে এমন নজির অহরহ প্রকাশিত হচ্ছে। অপমানিত হয়েও আত্মহত্যা করেছে। ধর্ষিত হয়েও অনেক বোন হয়তো আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।  আরও বহু কারণ থাকতে পারে।   

"বাধ্য হয়েই বেছে নিয়েছেন। "এই বাক্যটি প্রশ্ন তোলে, কেন বাধ্য হলেন? কারা বাধ্য করলো? নিশ্চয়ই সমাজ বাধ্য করেছে! সমাজের মানুষগুলোই হয়তো বাধ্য করেছে! অথচ, মানুষের বেঁচে থাকতে মানুষকেই যে দরকার! সুতরাং কাওকে পাশে না পেয়েই মরণের পথ বেছে নিয়েছেন।কিন্তু এতেই কি সমাধান হয়েছে? নাকি দিশেহারা হল একটি সম্পূর্ণ পরিবার? নিজেকে শেষ করে দিয়েই কি সমাধান ? অবশ্যই নয়। 

ভালোবাসায় ব্যর্থ হয়ে, ঠকবাজির শিকার হবার পর নিজেকে শেষ করে দিলেই সমাধান? অবশ্যই তা ভুল। যারা ভুল থেকে কোনোমতে বেঁচে গিয়েছে তাদেরই এমন বাক্য " আত্মহত্যার পথে যাওয়াটাই ভুল" বেঁচে থাকতেই যে মানুষ তোমার মর্ম বুঝতে পারেনি, তুমি মরে গেলে শুধুমাত্র সহানুভূতি দেখাবে সে আর বেশি কিছু সম্ভব নয়। 

ব্যবসায় এক পিঠে উত্থান দেখা গেলেও মেনে নিতেই হবে বিপর্জয় সামনে আসতে পারে। ব্যবসায় লোকসান থাকবে মেনে নিয়েই এই কাজে নামতে হবে, নয়তো এই পেশা আপনার জন্য নয়।পরিবার গঠনে পারস্পরিক সহনশীলতা দরকার। সুন্দর রুচিসম্মত আচরণ কাম্য।

পরীক্ষার একটা ফলাফল জীবনের সকল কিছু কোনোদিনই নয়। "একবার না পারিলে দেখো শতবার " বাক্যটি মেনে চলতে ক্ষতি কি? চেষ্টা করে গেলে সফলতা আসবেই।স্বপ্ন পূরণ করাটা লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য পূরণ করাটাই স্বপ্ন হওয়া উচিৎ।সবকিছু মেনে নিয়েই জীবন। সংকট আসবেই। প্রবল সংকট আসবে। বিপদাপন্ন হতেই হবে। হেরে জেতে হবে অনেক ক্ষেত্রে। ঠকবাজের শিকার হতে হবে। কিন্তু নিজের স্বত্ত্বাকে গড়তে হবে যাতে এমন বিপদ আমার দ্বারা যেন অন্যের প্রতি না হয়।

"তুমি অধম বলিয়া! আমি উত্তম না হইবো কেন? " 

"Life is not finding yourself, Life is about creating Yourself."

আপনার রাজ্যে আপনি ই রাজা। সেই রাজত্বে ঘেরা একটা জগৎ আবিষ্কারের চেষ্টা করে যেতে হবে। এজন্য মনের মাঝে সম্রাট হয়ে তা কাজে পরিণত করতে হবে। আজ একা আছেন,  সময়টাকে উপভোগ করুন।  হয়তো একদিন এই সময়টাকেই ভীষণভাবে কামনা করবেন!একা থাকায় হতাশা নেই। একা রাজ্যেও একটা হাওয়া আছে,  আছে আলাদা গন্ধ।  নানাবিধ ব্যাপার।যা আবিষ্কার করে নিতে হবে নিজেকেই। একা থাকায় হতাশার কিছু নেই। সবাই একা থাকতে পারেনা।        

পরিবার নিয়ে পরিপূর্ণভাবে বাঁচাতেও কল্যাণ আছে।এটাও বাস্তব জীবন।একটা বাক্য যেন আবেদন পায়, "বাঁচতে হবে, যতদিন সম্ভব। বেঁচে থাকা চাই মানবের তরে। মানুষের সেবায় জীবন অতিবাহিত করে যাবো। পারলে উপকার করব,  ক্ষতি করব না। হোক সে যত সামান্য উপকার। অন্যায়ের প্রতিবাদ করব। ন্যায়ের পথে,সত্যের পথে চলব। "কাজী নজরুল ইসলামের কথা  " আমার কর্ণধার আমি, আমাকে পথ দেখাবে আমার সত্য।"

যেভাবেই হোক বিপত্তি উপেক্ষা করে বেঁচে থাকতে হবে। কালো মেঘ দেখে ভীত -হতাশাগ্রস্ত না হয়ে ধৈর্য্য ধরাই আমাদের কর্তব্য। সকল কর্মের শুরুতে  সর্বশক্তিমান স্রষ্টার প্রতি ভরসা রেখে সম্পাদনা করা যেতে পারে।  মানসিক শক্তিই মূল শক্তি।  সবসময় তা বজায় রেখেই বাঁচতে হবে।  মরার আগে মরা যাবেনা।জোর করে, কায়দা করে বাঁচতে হবে। মরতে হলে মাথা উঁচু করে সিংহের মতো মরা শ্রেয়। কাপুরুষের মতো না।পাশে কেউ না ই বা রইলো  " আপন শক্তিতে একলা পথে অতিক্রম করতে হবে।  বাঁচবে মানুষ, এগিয়ে যাবে সমাজ,  দেশ। উন্নত হবে মানসিকতার।সুন্দর দিনের অপেক্ষায় সুখী মানবজীবনের প্রত্যাশায় - ইতি টানলাম।

লেখক,আসিফ মাহমুদ আমিন।

শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ,জবি।