পূজার প্রসাদ খেয়ে এক শিশুর মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪০

নিজস্ব প্রতিবেদক
আব্দুল কাদের, উপজেলা প্রতিনিধি, কালিগঞ্জ, সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: সোমবার ২৪শে জুন ২০২৪ ০৮:২৮ অপরাহ্ন
পূজার প্রসাদ খেয়ে এক শিশুর মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪০

মাসিক পূর্ণিমা পুজার প্রসাদ খেয়ে কাব্য দত্ত নামে ৫ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া অসুস্থ ৪০ জন নারী, পুরুষ, শিশুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায়  হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত রবিবার ( ২৩ জুন) রাতে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বেনের জাঙ্গাল ৪ রাস্তার মোড় সংলগ্ন বাসন্তী মন্দিরে। 


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাসিক পূর্ণিমা পূজার সময় বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য শংকর দত্তের নাতনি প্রথম প্রসাদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে বমি, পাতলা পায়খানা, পেট ব্যাথা শুরু হলে তাকে দ্রুত সাতক্ষীরা ডিজিটাল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত শিশু কাব্য খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার শৈলগাতি গ্রামের উত্তম দত্তের পুত্র। সে কয়েকদিন আগে মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। 


এছাড়া পূজার প্রসাদ (খিচুড়ি) খেয়ে বিষ্ণুপুর গ্রামের অর্ধ শতাধিক ভক্ত নারী-পুরুষ, শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে এদের মধ্যে ৪০ জন কে দ্রুত সোমবার  সকালে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বাকিদের স্থানীয় ক্লিনিক এবং বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। 


এদিকে খবর পেয়ে বেলা ২ টার দিকে কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শেখ মেহেদী হাসান সুমন এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শেখ ইকবাল আলম বাবলু হাসপাতালে যেয়ে অসুস্থ রোগীদের খোঁজখবর নেন। তবে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার না থাকায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। 


উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার বুলবুল কবির নিজে থেকে রোগীদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং আশঙ্কা মুক্ত বলে জানান। 


হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থদের মধ্যে বিষ্ণুপুর গ্রামের চন্ডীচরণ আচার্যের পুত্র সুব্রত আচার্য (৩৬,),তাপস দত্তের স্ত্রী মাধবী দত্ত (৪৫), মৃত আহমদ আলীর স্ত্রী সোনামণি (৭৫), তাপস দত্তের কন্যা সোমা দত্ত (২০), কাশীনাথের স্ত্রী চন্দনা (৬৫), স্বপন বিশ্বাসের স্ত্রী ধৃতি  বিশ্বাস (১৮), শংকর দত্তের স্ত্রী মনীষা দত্ত (৪৫),সঞ্জীত দত্তের স্ত্রী রত্না দত্ত (৪০), সহাদেব মন্ডলের স্ত্রী কনিকা মন্ডল (৩৫), মহাদেব মন্ডলের স্ত্রী মোহনা মণ্ডল এবং তার শিশু পুত্র রদ্রি মন্ডল, মৃত অজয় দত্তের স্ত্রী সুন্দরী মন্ডল (৩৫), সহদেব মন্ডলের স্ত্রী আরতি আচার্য্য(৩৩),অরবিন্দ আচার্য এর স্ত্রী রত্না আচার্জি (২৪),রামপ্রসাদ দত্তের স্ত্রী সম্পা দত্ত(২৬), এবং কন্যা শ্রেয়সী(২৪),জগবন্ধুর স্ত্রী শিউলি দত্ত (২৭), মৃত বিজয় কৃষ্ণের পুত্র রামপ্রসাদ দত্ত  (৬৮), তাপস দত্তের পুত্র তন্ময় দত্ত (১৪), অবনী বিশ্বাসের পুত্র  বিশ্বাস( ৩৮), দেবদাস আচার্যের পুত্র রিপন আচার্য ৩৫), 


জগবন্ধু দত্তের পুত্র রাহুল দত্ত (২৬), অনিল দত্তের পুত্র শোভন দত্ত (২১), কাশীনাথ দত্তের পুত্র সুব্রত দত্ত (৩৬), মৃত অজয় দত্তের পুত্র পরিমল দত্ত ২৮)., মৃত অজয় দত্তের পুত্র সঞ্জীত  দত্ত (৩০), সঞ্জীব দত্তের পুত্র প্রান্ত দত্ত (১৬), তপন বিশ্বাসের পুত্র রিপন বিশ্বাস (২৬), মৃত সুধীর কর্মকারের পুত্র নিত্যানন্দ কর্মকার( ৪০), মৃত নিশি পদ্ম সরকারের পুত্র পিন্টু সরকার (৩৪)  শংকর দত্তের পুত্র সুমন দত্ত (২৫),মৃত রেনু মন্ডলের পুত্র অরবিন্দু মন্ডল (৪৫), অরবিন্দ মন্ডলের পুত্র প্রাপ্ত মন্ডল (২২)। 


হাসপাতালে ভর্তি  জগবন্ধু, কাশীনাথ, অরবিন্দু, মহাদেব সহ একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান প্রতি মাসের ন্যায় এ মাসেও তারা পূর্ণিমা পূজার আয়োজন করে। সেই মোতাবেক বিষ্ণুপুর বাজারের চিত্ত রঞ্জন ময়রার পুত্র পলাশ ময়রার বাড়িতে প্রসাদের রান্নার আয়োজন করা হয়। পলাশের বাড়িতে রান্না শেষে রাতে প্রসাদ গুলো মন্দির প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। সেখান থেকে রাত আনুমান ১২ টার দিকে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ( খিচুড়ি) বিতরণ করা শুরু হয়। তখন থেকে প্রসাদ খাওয়ার পর একে একে পেট ব্যাথা, বমি, পাতলা, পায়খানা শুরু হলে প্রথমে বিষয়টি তোয়াক্কা না করলেও পরবর্তীতে অধিকাংশ ভক্ত নারী-পুরুষ শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। 


তাদের ধারণা কেউ প্রসাদ রান্না করার সময় কোন দুষ্টু চক্র বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। 


ঘটনা জানার পর কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহিন এবং কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার বুলবুল কবির রবিবার দুপুরে ঘটনাস্থান পরিদর্শন করে খোঁজখবর নেন।