এটিএম বুথ থেকে পানি নিয়ে দোকানে বিক্রি!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ১৮ই জানুয়ারী ২০২০ ০৫:০৫ অপরাহ্ন
এটিএম বুথ থেকে পানি নিয়ে দোকানে বিক্রি!

নিরাপদ, বিশুদ্ধ ও স্বল্পমূল্যে খাবার পানি পৌঁছে দিতে এটিএম পদ্ধতির উদ্যোগ নেয় ওয়াসা। কর্তব্যরত ব্যক্তির অবহেলা আর অসাধু কিছু ব্যবসায়ীর কারণে ভেস্তে যাচ্ছে এ সেবার মূল লক্ষ্য। বুথ থেকে কম দামে পানি কিনে দোকানে বেশি দামে বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে রাজধানীতে। এ ছাড়া বুথে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরাও এ কাজে জড়িত বলে জানা গেছে। যদিও মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যানডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) বলছে, এভাবে পানি বিক্রির নিয়ম নেই।

বিএসটিআই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইতিমধ্যে অবৈধ পানি বিক্রি বন্ধে ঢাকা ওয়াসা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগকে গত বছরের ২৮ মার্চ একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ওয়াসার এটিএম বুথ থেকে জারের মাধ্যমে পানি বিক্রি করা যাবে না।

চিঠিতে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষ থেকে ২০ লিটার জারের মাধ্যমে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য কোনো গ্রাহক ওয়াসার এটিএম বুথ থেকে পানি সংগ্রহ করতে পারবে না বলে গ্রাহকদের অনুরোধ করা হয়। উল্লেখিত চিঠিতে ওয়াসার প্রকৌশলী মো. ইরান খানের স্বাক্ষর ছিল। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন।

সরেজমিনে দেখা যায়, একটি বিশ লিটার জারে প্রায় ৬৬ /৬৭ গ্লাস পানি ধরে। দোকানে বিক্রি করা গ্লাসের পানি পরিমাপ করে দেখা যায় প্রতিটি গ্লাসে ৩০০ গ্রাম পানি ধরে। যার বিক্রয় মূল্য প্রতি গ্লাস ১ টাকা হারে। অথচ প্রতি বিশ লিটার পানির জার ওয়াসার এটিএম থেকে নিতে খরচ হয় মাত্র ৮ টাকা। প্রতি লিটার ৪০ পয়সা হারে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আজিমপুর ইরাকি মাঠ সংলগ্ন পানির পাম্পের এটিএম বুথ থেকে থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করছেন গ্রাহকরা। যেখানে দুইটি এটিএম বুথ রয়েছে। যার মধ্যে একটি বুথ বড় জারের জন্য (বুথের গায়ে লেখা আছে)। ফলে একটি বুথ থেকে পানি সংগ্রহ করতে প্রায়ই জট লাগে গ্রাহকের।

গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার সময় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এক ব্যক্তি নীল রঙের পাঁচটি জার নিয়ে এসেছেন। জারগুলোতে পানি ভরে রিকশায় তুলে নেন তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো বাসার জন্য। দোকানের জন্য নয়। এদিকে নিয়ম অনুযায়ী রাত ১০টার ওয়াসার এটিএম খোলা থাকার কথা। তবে সাড়ে ৯টার পর রিচার্জ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

মো. বিজয় নামে এক গ্রাহকের অভিযোগ, রাতে একটু দেরি হলেই তারা রিচার্জ করে দেন না। বলেন সব ক্লোজ করা হয়েছে। পরে বাধ্য হয়ে ওদের কার্ড থেকে পানি ভরতে হয়। প্রতি ১০ লিটার পানি নিতে দাম নিয়েছে ৮ টাকা দিয়ে। অথচ প্রতি লিটার পানির সরকারি মূল্য ৪০ পয়সা।

এ বিষয়ে কর্তব্যরতদের কাছে জানতে চাইলে রোকাইয়া জানায়, যত সময় বুথ খোলা থাকে তত সময় টাকা রিচার্জ করার নিয়ম থাকলেও, বিকাশের দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যায় যে কারণে আমরা ৯টা-সাড়ে ৯টার মধ্যে ক্লোজ করে দিই। কারণ নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিন পরিশোধ করতে হয়।

একই চিত্র গ্রিন রোডের এটিএম বুথে, যেখানে বুথ থেকে পানি সংগ্রহ করে দোকানে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে জানতে দোকানি আঙুল আহাদ বলেন, সব সময় বুথ থেকেই পানি সংগ্রহ করি দোকানের জন্য। কেউ কিছু বলে না। যদিও তার যুক্তি গতানুগতিক জারের পানি থেকে ওয়াসার পানির মান শতগুণ ভালো এবং ক্রেতারাও সন্তুষ্ট থাকে।

মিনার হোসেন নামে এক গ্রাহক দীর্ঘদিন হাজারীবাগ এটিএম বুথ থেকে পানি সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, এখানে একদিকে দুপুর ২টার পর পাম্প বন্ধ হয়ে যায়। অন্য দিকে টাকা রিচার্জ করতে গেলে বলে ৫০ টাকা করা যায় না, ১০০ টাকার বেশি করতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাজারীবাগ এটিএম বুথে দায়িত্বে থাকা দিপ রঞ্জন জানান, ১০০ টাকার বেশি রিচার্জ করতে গ্রাহকদের বাধ্য করা হয় না। তবে আমরা একসঙ্গে বেশি টাকা ভরতে বলি।

জারে পানি নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত আমরা জারে পানি না নেওয়ার জন্য বলি, তবে এলাকার স্থানীয় লোকেরা এবং স্থানীয় দোকানিরা পানি নেয়। আমরা না করলেও শোনে না। ড্রিংক ওয়েল ও ওয়াসা যৌথভাবে ২০১৬ সঙ্গে সর্বপ্রথম ফকিরাপুল অঞ্চল-৬ এ বুথ বসায়। পরবর্তী বছর থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে এ বুথ বসানো শুরু হয়।

জানা যায়, বর্তমানে ওয়াসার ৯৫টি পানির পাম্পের সঙ্গে এটিএম বুথ রয়েছে। ২০২০ সাল নাগাদ ৩০০ পাম্প হাউসে এসব যুক্ত করা হবে। এটিএম বুথ থেকে গ্রাহকদের সেবা পেতে ২০০ টাকা জামানত দিয়ে একটি কার্ড নিতে হয়। পরে মেলে প্রি-পেইড স্মার্ট কার্ড। এই কার্ডে টাকা ঢুকিয়ে পানি কেনা যায়। যার জন্য গ্রাহকদের প্রতি লিটার পানির জন্য গুনতে হয় ৪০ পয়সা।

পানি বিক্রির এসব অনিয়মে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিএসটিআই উপপরিচালক (জিএম) মো. সিরাজুল হক বলেন, ইতিমধ্যে আমরা চিঠি দিয়েছি। এ সেবা শুধু বাসাবাড়ির জন্য। কেউ যদি বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করতে চায়, বিএসটিআই থেকে লাইসেন্স লাগবে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব