আশুলিয়ায় সাংবাদিককে হত্যার পরিকল্পনাকারী কে এই রুবেল?

নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সী মেহেদী হাসান
প্রকাশিত: বুধবার ২৭শে নভেম্বর ২০১৯ ০৬:৪৫ অপরাহ্ন
আশুলিয়ায় সাংবাদিককে হত্যার পরিকল্পনাকারী কে এই রুবেল?

শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় এক সাংবাদিককে হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ হামলার মূল হোতা, মাস্টার মাইন্ড, আশুলিয়ার সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি আর মাদক ব্যবসায়ীদের  ইন্ধনদাতা, শীর্ষ সন্ত্রাসী  রুবেল ভূইয়া এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে আছে বলেও অভিযোগ ভূক্তোভোগির।  

সন্ত্রাসী হামলার শিকার বাংলা টিভির আশুলিয়া প্রতিনিধি মো: আলমগীর হোসেন নীরব সাংবাদিকদের জানান, গত ৭ই নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে  নাজমুল ইসলাম(৪২) নামের ব্যাক্তি নিউজের কথা বলে আমাকে ফ্যান্টাসী কিংডমের গাড়ি পার্কিং জোনের ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যায়। এসময় একটি নোহা মাইক্রো গাড়িতে    হেলাল শেখ(৪৫),  সাব্বির (৩০), জাহিদুল ইসলাম(৩২), বাঁধন দাস  (৩৫) সহ অজ্ঞাত ১০/১২ জন আমাকে এলোপাথাড়ী মারতে থাকে এবং বলে যে উপর থেকে অর্ডার হইছে তোকে আজ মেরে ফেলবো। তখন পাশেই নোহা মাইক্রো গাড়িতে কয়েকজন বসে ছিলো। একপর্যায়ে আমার আত্নচিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে গুরুতর আহত অবস্থায়    আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। একটু সুস্থ্য হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ১০/১২ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে    আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করি,  মামলা নং -৫৩। 

এরপর এক নাম্বার আসামী নাজমুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার স্বীকারোক্তি ও গোপনসুত্রে জানতে পারি আমাকে হত্যার জন্য সন্ত্রাসীদের  অর্থ জোগান,  গাড়ি দিয়ে ইন্ধন জোগানোসহ  মূল  পরিকল্পনাকারী হলো আশুলিয়া থানা পুলিশের শীর্ষ তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী সুমন ভূইয়ার বোন জামাই শীর্ষ সন্ত্রাসী রুবেল আহম্মেদ ভূইয়া ও হেলাল শেখ। তবে তারা ঠিক কি কারনে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল তা জানা যায়নি। বর্তমানে এ মামলায়  রুবেল ভূইয়ার নাম না থাকায় এবং অন্য আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতার  অবস্থায় আতঙ্কের মধ্যে  জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

আমাকে যারা প্রাণে মেরে ফেলতে চেয়েছিল তাদের গ্রেফতার করে  বিচারের আওতায় আনতে জোর দাবী জানাচ্ছি। অন্যদিকে গত  সাংবাদিক আলমগীর হোসেন নীরবে হত্যার উদ্দেশ্য  সন্ত্রাসী  হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এবং দোষিদের শাস্তির দাবীতে গত ১৮/১১/১৯ইং সোমবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে সাভার আশুলিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা। 

উল্লেখ্য, নরসিংদী জেলার মৃত সামছুদ্দিন আহম্মেদের পুত্র রুবেল আহম্মেদ ভূইয়া আশুলিয়ার জামগড়া  এলাকায় পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সাবেক যুবলীগ নেতা সুমন ভূইয়ার বোনকে বিয়ে করে। এবং এলাকায় ঘরজামাই হিসেবেও তার পরিচিতি লাভ করে।  এরপর থেকে সুমন ভূইয়ার আধিপত্য ও ক্ষমতার দাপটে রুবেল ভূইয়াও হয়ে ওঠে অপরাধ জগতের সম্রাট। সুমন ভূইয়া ও রুবেল ভূইয়ার  বিরুদ্ধে  সাভার, আশুলিয়া,কালিয়াকৈর,   গাজীপুর  থানায় হত্যা, ঝুট ব্যবসা দখল,  ডাকাতি, ধর্ষণ, ভূমিদস্যুতা, অস্ত্র ও  চাদাঁবাজির ডজনখানেক মামলা ও সাধারণ ডায়েরী  রয়েছে। তাদের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে আশুলিয়া ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের। এছাড়াও গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা দখল ও নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে প্রায়শই তারা এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে রাখে। এদের ভয়ে এলাকার অধিকাংশ মানুষই  মুখ খুলতে নারাজ। অবৈধ অস্ত্র, কালো টাকা আর পেশি শক্তির প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষকে এক প্রকার জিম্মি করে রেখেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে  অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার কারনে এরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।   

সম্প্রতি  রুবেল ভূইয়া গত ০৮/১১/১৯ ইং তারিখ রাতে  যুবলীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার মামলার প্রধান আসামি, আশুলিয়া থানা মামলা নং -২৯/৯২৮। আশুলিয়া থানা এফ আই আর নং-৪৪,  চাঁদার দাবীতে ও হত্যার উদ্দেশ্য মারপিট, লুটপাট ও ভাংচুর এ মামলায় রুবেল  তিন নম্বর আসামি। ২০১৮ ইং জুলাই মাসে জামগড়া গফুর মন্ডল স্কুল সংলগ্ন পরিবহন চালক জাহিদ হাসান বেপারীর সাড়ে ছয় শতাংশ জমির উপর টিনশেট বাড়িটি দখলের জন্য সুমন ও রুবেল ভূইয়ার নেতৃত্বে কয়েক দফা হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে।

গত ০৬/০৯/১৯ ইং তারিখে বেরন ৬তলা এলাকার স্টারলিং কারখানার বিপরীতে সংখ্যালঘু পরিবার শ্রী ধীরেন্দ্র চন্দ্র সরকারের পৈত্রিক বসতবাড়ি দখলের উদ্দেশ্য হামলা চালিয়ে দোকানপাট, স্থাপনা ও সাইনবোর্ড ভাংচুর করে সুমন, উজ্জল ও রুবেল ভূইয়া গংরা, এ বিষয়ে আশুলিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি অবৈধ অস্ত্র ক্রয় করে তা পর্যবেক্ষণ করছেন রুবেল ভূইয়া এমন একটি ভিডিও চিত্র ভাইরাল হয়ে উঠেছে আশুলিয়া জুড়ে। রুবেলের বিরুদ্ধে  দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভাড়াটিয়া খুনি ও সন্ত্রাসীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনের কাছে এদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী  ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন ভূক্তোভোগি ও সাধারণ মানুষেরা।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব