এক নার্সারী কারিগরের সফলতার গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শুক্রবার ৮ই নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৫১ অপরাহ্ন
এক নার্সারী কারিগরের সফলতার গল্প

ভোলার বোরহানউদ্দিনের এক নার্সারী কারিগরের নাম মো হাবিব। পড়াশোনা করেছেন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের ছাগলা গ্রামের এক সময়ের বর্গা চাষী মো. হাবিব এখন  প্রায় তিন একর জমিতে গড়ে তুলেছেন বিশাল নার্সারী। শুরু থেকেই তিনি সাফল্য পেয়েছেন। এতে একদিকে পরিবারে তার এসেছে আর্থিক সচ্ছ¡লতা। অন্যদিকে তিনি প্রমান করেছেন, অন্য জেলা থেকে গাছের চারা বা কলম না এনে  চেষ্টা, একাগ্রতা থাকলে নার্সারী করে উৎপাদিত চারা দ্বারা এলাকার চাহিদা অনেকটা পূরণ করা সম্ভব। হাবিবের অনুপ্রেরণায় স্থানীয় যুবকরা নার্সারী করার দিকে ঝুঁকছেন। 

প্রায় দুই শতাধিক প্রজাতির ফলদ চারায় সমৃদ্ধ তার নার্সারী। দিন দিন তার নার্সারীতে গাছের প্রজাতির সংখ্যা বাড়ছে। থেমে নেই বিভিন্ন জাত সংগ্রহ। নতুন প্রজাতি বা গাছের খবর শুনলেই সেদিকে ছোটেন তিনি। এছাড়া তিনি প্রতি মৌসুমে প্রায় বিশ প্রজাতির সবজীর চারা উৎপাদন করে বিক্রি করেন। 

উপজেলা সদর থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরে হাবিব নার্সারীতে হাবিব জানান, বোরহানউদ্দিন সহ গোটা ভোলা জেলায় জলপথে সরুপকাঠি থেকে গাছের চারা আসতো। এখনও আসে। ২০০২ সালে আমার মনে প্রশ্ন জাগলো সরুপকাঠিতে চারা উৎপাদন হলে আমাদের এখানে কেন হবেনা। এরপর আমি সরুপকাঠি যাই। রাতে  হোটেলে থাকতাম, আর দিনে ওদের নার্সারিতে চলে যেতাম। ওরা কিভাবে গুটি কলম, শাখা কলম, গ্রাফটিং করে তা মনযোগ দিয়ে দেখতাম। কাজটা আমি আস্তে আস্তে শিখে ফেলি। তাপরপর সরুপকাঠি থেকে কিছু গাছ কিনে দেশে চলে আসি। আমার জমি ছিলনা। আট শতক জমি বর্গা নিয়ে কলম করার কাজ শুরু করি। তখন মাত্র এক চতুর্থাংশ কলম হয়েছে। বাকিগুলো হয়নি। আবার  স্বরুপকাঠি যাই। ভুলগুলো সুধরাই। ওদের পরামর্শ নেই। আর সমস্যা হয়নি।

এরপর বগুড়া সহ দেশের অনেক এলাকায় শিখতে গিয়েছি। আবার আসার সময় মাতৃগাছ কিনে বাড়ি ফিরেছি। জাত বেড়েছে, প্রজাতি বেড়েছে। যেমন, নার্সারীতে আমের ৮ টি, কমলার ৪ টি, বড়ই’র ৫ টি, মাল্টার ৪ টি, পেয়ার ৪ টি প্রজাতির কলমের চারা আছে। এরকম প্রায় সব ফলের।  জাত-প্রজাতি বাড়ার কারণে নার্সারীর জায়গা বাড়াতে হয়েছে। গাছের পাশাপাশি আমি উন্নত জাতের পেঁপে, বেগুন, টমেটো, মরিচ, লাউ, সীম সহ নানা প্রজাতির সবজীর চারা উৎপাদন করি। গাছের কলম, চারা, সবজী চারা বেশীর ভাগই ক্রেতারা নার্সারী থেকে কিনে নিয়ে যায়। তবে উপজেলার বিভিন্ন হা্েটও বিক্রি করি। 

হাবিব আরো জানান, নার্সারীর আয় দিয়েই তার সংসার চলে। এর থেকে কিছু সঞ্চয় করেন। এছাড়া আশি শতাংশ জমিও কিনেছেন। গড়ে প্রতিদিন তার নার্সারীতে ৫ জন লোক কাজ করে। এ বছর প্রায় ১৬ লাখ টাকার গাছের চারা, কলম ও সবজী চারা বিক্রি করেছেন। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৫ লাখ টাকা আয় হয়েছে। 

হাবিবের স্ত্রী মনোয়ারা শুরুর দিকে স্বামীর সাথে নার্সারীতে সমান তালে কাজ করত। তাদের ২ ছেলে ২ মেয়ে। বড় মেয়ে খাদিজা এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিবে। ছোট মেয়ে জান্নাত সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলে তানজিল প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে ইব্রাহিমের বয়স ৪ বছর। 

হাবিবের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জানান, নিজে এসএইসি পাশ করে আর পড়াশোনা করা হয়নি। কিন্তু সন্তানদের লেখাপড়া করিয়ে শিক্ষিত করবেন। 

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব