সরাইলে স্কুল মাঠে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
মো: তাসলিম উদ্দিন, উপজেলা প্রতিনিধি সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৩৭ অপরাহ্ন
সরাইলে স্কুল মাঠে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ

পুরোট সময় বিদ্যালয়ে মাঠে বাঁধের পানিতে ডুবে থাকে। স্কুলটির মাঠে বছরে সব সময় জুড়ে এমনই চিত্র দেখা মেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা শাহজাদাপুর পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। বছর শেষ হলে ও পানি থাকায় মাঠে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বেহত হচ্ছে। এমনকি কোমলমতি শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে না পারায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে। এদিকে জানাযায়, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন। অভিভাবকদের মধ্য থেকে বিষয়টি মৌখিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরকে একাধিকবার জানানো হলেও রহস্যজনক কারণে এ ব্যাপারে প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করে আসছে। 

সরেজমিন দেখা যায়, প্রথমে দেখলে মনে হবে বিদ্যালয়টির সামনে বিশাল পুকুর। নানা প্রজাতির মাছ এই পুকুরে চাষাবাদ হচ্ছে। আসলে এটি পুকুর নয়, শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ। পুরো মাঠে হাঁটুপরিমাণ পানি। স্থানীয় ভাবে অভিযোগ উঠেছে শাহজাদাপুর গ্রামের কয়েকজন মিলে বিগত প্রায় চার বছর যাবত বিদ্যালয়ের এই খেলার মাঠে তারা বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন ক্ষমতার দাপটে।
 এই খেলার মাঠ ওই মাছ চাষীদের কাছে ইজারা দিয়ে প্রতিবছর টাকা কামিয়ে যাচ্ছেন। 

এ বিদ্যালয় মাঠে বাঁধে জমানো পানিতে ডুবে গত ১০ অক্টোবর ২০১৭ সালে মারা যায় শাহজাদাপুর গ্রামের মো. মনু পাঠানের পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে তিশা। এই দূর্ঘটনার পরও শিক্ষা কর্মকর্তা বিষয়টি আমলেই নেননি। নিহত তিশার মাতা মারুফা খানম জানান, বিদ্যালয়ের মাঠে ছেলে-মেয়েরা খেলাধূলা করবে। সেখানে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এই পানিতে ডুবে আমার মেয়ে মারা গেল। পরবর্তীতে আরও দু'তিনটি শিশু এ মাঠের পানিতে ডুবেছে, তবে আল্লাহতালা সেই শিশুদের বাঁচিয়েছেন। আমার মেয়েটাকে বাঁচাতে পারলামনা। আমি এর কোনো বিচার পাইনি। মাঠের পানিও ছাড়া হয়নি। আসলে এই দেশে কোন ন্যায় বিচার নেই। 

এদিকে খেলার মাঠে জমানো পানি নিষ্কাশন করে তাদেরকে খেলাধুলার ব্যবস্থা করার দাবিতে কিছুদিন আগে এই বিদ্যালয়ের খোদ শিক্ষার্থীরা বইখাতা নিয়ে ক্লাস বর্জনের পর বাইরে এসে আন্দোলন করলেও বিষয়টি কেউই আমলে নেননি। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এ প্রতিবেদককে জানান, এ স্কুলে পড়া- লেখা করতে ভালো লাগেনা, খেলার মাঠ পানিতে ডুবে থাকে।খেলতে পারিনা, স্কুলের প্রবেশ করার সময় বেশীর ভাগ সময় পানিতে পড়ে গিয়ে কাপড় ভিজে যায়, ভিজে কাঁপড় পড়তে হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা স্কুলের মাঠের পানির বাঁধ না দেওয়ার দাবী করেন। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. ইয়াছমিন বেগম বাঁধের কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান, তিনিও চান এই খেলার মাঠে মাছ চাষ বন্ধ করতে। কিন্তু তিনি সেই প্রভাবশালীদের ক্ষমতার সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না।সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর মুঠোফোনে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. দুলাল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, শাহজাদাপুর গ্রামের আজিজুল মিয়া ও কয়েকজন মিলে এ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। তাদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে আমরা কোন টাকা-পয়সা নেইনি। এ মাঠের পানি সরিয়ে ফেলতে আজকে একটি মিটিং করেছি। আগামি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে এই খেলার মাঠ মাছ চাষ মুক্ত করবো। সরাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজ বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিব। সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এস এম মোসা সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি কেউই আমাকে জানাননি। এখন জেনেছি, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব