ফিশ ফিডের নামে এমবিএম আমদানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ২১শে জুলাই ২০১৯ ১০:২১ পূর্বাহ্ন
ফিশ ফিডের নামে এমবিএম আমদানি

ঢাকার পাঁচটি বাজার থেকে ব্রয়লার মুরগী কিনে ল্যাব পরীক্ষা করে যখন দেখলাম সবগুলোতেই সীসা মাত্রার উপরে, এরপর আর পরীক্ষা করিনি। দুই তিনটি ভাত টিপে বুঝা যায় এক হাঁড়ি ভাতের অবস্থা। একটি ল্যাব নিজেরাই পরীক্ষা করে দেশি মুরগীতেও সীসা পেয়েছিল মাত্রার উপরে। তারা প্রায় সব দেশি মাছেও মাত্রার উপরে সীসা বা লেড পেয়েছিল। কয়েকদিন আগে ১০ জেলার গ্রামের খামারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা কাঁচা দুধের ৫০টি নমুনাতেই সীসা পাওয়া গেছে মাত্রার উপরে। আমরা অনেকদিন থেকেই পোল্ট্রি, মৎস্য এবং পশু খাদ্যের নিরাপদতার উপর গুরুত্ব দিয়ে আসছিলাম। এর এক পর্যায়ে বিদেশ থেকে আনা এমবিএম (মিট এন্ড বোন মিল) বা মরা প্রাণীর হাড় মাংসের গুঁড়ার আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলাম আমরা। সাহায্য করার জন্য প্রাণি ও মৎস্য সম্পদ মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ দিতেই হয়। এটা প্রায় ৭/৮ মাস আগের কথা।

কিন্তু থেমে থাকেনি এমবিএম আমদানি। মহান আমদানিকারকরা অন্য নামে অর্থাৎ ফিশ ফিড (Fish Feed) নামে সরকারের অনুমতি নিয়ে আমদানি করছিলেন এমবিএম। ধরতে পারছিলাম না, লেগে ছিলাম সুযোগের অপেক্ষায়। অতি সম্প্রতি কাস্টমস কমিশনার, চট্টগ্রাম (বর্তমান) মহোদয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ফিশ ফিড নামে বন্দরে আসা সব চালান আটকে দিয়ে ল্যাব পরীক্ষা করা দেখা যাচ্ছে এগুলো আসলে এমবিএম। পোরসাইন এবং বোভাইন টেস্ট পজিটিভ। এরুপ তিনটি চালানের ফলাফল পাওয়া গেছে। বাকিগুলোর পরীক্ষাও চলছে। মাল বাজেয়াপ্ত সহ শাস্তি হজম করতে হবে এইসব আমদানিকারকদের। এখন থেকে কোন প্রকার পশু বা মৎস্য খাদ্য, তা যে নামেই আসুক না কেন সেটা পোরসাইন এবং বোভাইন (শুয়োর এবং ক্যাটেল) টেস্ট করে কিছু পাওয়া না গেলেই মাল খালাস করা যাবে। সব আমদানিকারক আটকে গেলেন যারা এই অপকর্মটি করেছেন।

আর একটি অভিশাপ হচ্ছে ট্যানারি বর্জ্য। সাভারে প্রতিদিন ১২৬ মেঃ টন বর্জ্য উৎপাদন হয়, যার কোন ব্যবস্থাপনা নেই এবং এর প্রায় সবটুকুই পোল্ট্রি এবং মৎস্য খাদ্যে মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে সারা দেশব্যাপি। আমরা বিসিক সহ ট্যানারি মালিক সমিতি এবং শিল্প মন্ত্রণালয় এর প্রতিনিধিদের নিয়ে বসেছিলাম। বিসিক এর কাছে গত ছয় মাসে উৎপাদিত ট্যানারি বর্জ্যের হিসেব চাওয়া হয়েছে। আগামি কয়েকদিনের মধ্যেই সাভার ট্যানারি পল্লী পরিদর্শনে যাওয়া হবে। বলা হয়েছে কোন কম্প্রোমাইজ নেই। এক ছটাক বর্জ্যও শিল্প এলাকার বাইরে যেতে পারবে না। আসছে ম্যাসিভ পরিবর্তন ইনশাআল্লাহ। পশু, পোল্ট্রি এবং মৎস্য খাদ্যকে পরিশুদ্ধ করতে না পারলে এসব খাদ্য থেকে হেভি মেটালের অভিশাপ থেকে আমরা মুক্ত হতে পারব না। আরও অনেক ক্রাইটেরিয়া আছে যেগুলোকে ঠিক করতে হবে।

এ আমাদের বাঁচা-মরার সমস্যা। আমরা চাইনা সবাই ক্যান্সার, কিডনি ফেইলিউরে মরুক। আমাদের এসবের রুট খঁজে বের করে তা দূর করতে হবে। আশার খবর, আজ এক পত্রিকায় দেখলাম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ হতে একটি টাস্ক ফোর্সে গঠন করা হয়েছে সমস্যার মূল খুঁজে বের করার জন্য। তাঁরা দেশব্যাপী কাজ করবেন। আমাদের সবার সাহায্য দরকার। সাহায্য করুন যে যেভাবে পারেন। সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। যে দেশে চালে সীসা পাওয়া যায় মাত্রার উপরে, সেখানে যুদ্ধ করতে হবে কতটুকু তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যুগযুগ ধরে চলা জাঞ্জাল সাফ করতে হয়ত অনেক সময় লাগবে আমাদের। তবুও আমরা আশাবাদী। পারব আমরা ইনশাআল্লাহ। আমাদের মাটি পানি আকাশ বাতাস সব গেছে। ফিরিয়ে আনতে হবে আবার, যতটুকু পারা যায় আমাদের সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য।

ইনিউজ ৭১/এম.আর