কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের চারলেনে উন্নীতকরণের কাজের দেখা নেই। ভিশন ২০৪১ সামনে রেখে দেশের সড়ক-মহাসড়কের সক্ষমতা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্বোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। এর আওতায় জাতীয় মহাসড়কগুলো চার লেন থেকে সর্বোচ্চ ১০ লেন হবে। আর উখিয়া-টেকনাফ শহিদ জাফর আলম আরাকান সড়ক হবে চারলেনে। এর বাইরেও কিছু বৈশিষ্ট্য যুক্ত হবে সড়কে। ২০০৫ সালে সর্বশেষ করা নকশায় সর্বোচ্চ চার লেনের মহাসড়কের সুপারিশ ছিল। এরপর এক যুক পেরিয়ে গেলেও সুপারিশ অনুযায়ী বাস্তবায়ন হয়নি। যদিও গাড়ি অনেক বেড়েছে। সারা বিশ্বের দৃষ্টি এখন কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের দিকে। এই সড়কের গুরুত্ব অনুযায়ী প্রশস্ততা বাড়বে, তেমনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক হবে চার লেনের। উখিয়া-টেকনাফ সড়কে প্রতিদিন সৃষ্টি হয় দীর্ঘ ও দু:সহ যানজট।
রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে দেশি বিদেশি এনজিওতে কর্মরত নারী-পুরুষ এবং স্থানীয় যাত্রীদের এক যন্ত্রণাকর অবস্থায় শ্বাস নিতে হয়। গাড়ি যারা চালান তাদেরও একই দুর্দশা। তবে সড়কে এই অবস্থা ২০২১ ও ২০৪১ সালের ভিশন অনুযায়ী অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে বাধা তৈরি করবে। তাই এই সড়কের গুণগত উন্নয়ন দরকার। বিবিধ কারণে এই সড়কে ভয়ঙ্কর যানজট হয়। তার মধ্যে একটি হলো ক্যাম্পে বাশসহ পণ্যবাহী গাড়ির মাঝপথে বিকল হয়ে যাওয়া। ভাগ্য ভাল হলে যন্ত্রণা দুর হয়। নইলে নিজের কপাল নিজে চাপড়ান। মরিচ্যা থেকে থাইংখালী পর্যন্ত দীর্ঘ পথ তীব্র যানজট দেখা দেয়। পনেরো মিনিটের পথ পাড়ি দিতে এক একটি গাড়ির সময় লেগে যায় দেড় ঘন্টা।টেকনাফ মেরিন সিটি হাসপাতালের এমডি নুরুজ্জামান শিবলী জানান, উখিয়া-টেকনাফ সড়কে গাড়ির চাপ এতই বেশি যে, স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালানো সম্ভব হয় না। যানজটে আটকে থাকা ট্রাক চালক শাহ আলম বলেন, উখিয়া বালুখালী কাষ্টমস এলাকায় গাড়ি থামিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা কালে চালকের সঙ্গে তাদের বাকবিতন্ডা চলতে থাকলে যানজট তৈরি হয়ে যায়। দালালদের ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা দিয়ে নিস্তার মেলে। পাশাপাশি সড়কজুড়ে ফিটনেসবিহীন ও নিষিদ্ধ যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলের কারণে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে হাজার হাজার যাত্রী।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), সড়ক ও জনপদ বিভাগের যৌথ অর্থায়নে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত শহীদ এটিএম জাফর আলম আরাকান সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কাজ শুরু হওয়ায় এতদঞ্চলের মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল। উক্ত সড়ক নির্মাণ কাজ বর্ষার আগেই দৃশ্যমান উন্নয়ন না হওয়ায় সড়কটির অবস্থা বর্তমানে কাহিল হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করে যাত্রী সাধারণ জানান, সড়কটির এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কোন খানে গেলে আবার যে ফিরে আসা হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ব্যস্ততম এ সড়কটির দ্রুত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্মাণাধীন ৫০ কিলোমিটার সড়ককে ২টি প্যাকেজে ভাগ করেছে। তৎমধ্যে প্রথম প্যাকেজ ১শত ২২ কোটি টাকা চুক্তি সাপেক্ষে কক্সবাজার লিংক রোড থেকে উখিয়া ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে টিসিসিএল এন্ড মেসার্স জামিল ইকবাল লিঃ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। ২য় প্যাকেজ ১শত ৫৪ কোটি টাকা চুক্তি সাপেক্ষে উখিয়ার ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন থেকে টেকনাফের উনচিপ্রাং পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে তাহের ব্রাদার্স লিঃ, হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিঃ ও সালেহ আহমদ বাবুল নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। উখিয়া বাস-মিনিবাস মালিক শ্রমিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো জানান, ঠিকাদারী সংস্থার কাজের গতি দেখে মনে হয় এ সড়কটি আগামী ৫ বছরেও উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হবে না। সড়ক পথে মানুষের আহাজারি, যাত্রীদের দুভোর্গ যেন এক নিত্যদিনের চিরাচরিত প্রথায় পরিণত হয়েছে। তিনি অবিলম্বে কাজের গতি বাড়িয়ে এলাকার মানুষের যাত্রা দুভোর্গ কমিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা জানান, সড়কের উভয় দিকে ৩ ফুট করে ৬ ফুট এবং জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৪৫ ফুট সড়ক সম্প্রসারণ করা হবে। তিনি বলেন, নির্মাণ কাজের গুনগতমান ও টেকসই উন্নয়ন কাজ করার জন্য ঠিকাদারদের নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সড়কের বিভিন্ন অংশে দখল বেদখল ও অবৈধ স্থাপনা সহ সড়কের অংশ বিশেষ পুণঃ মাটি দিয়ে ভরাট করতে গিয়ে উন্নয়ন কাজ এগোয়নি। তিনি বলেন, দুটি প্যাকেজে ৫০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের আওতায় আনা হয়েছে তা অতিসম্প্রতি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছিল বিধায় প্রথম ধাপে ৫০ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হলে পরবর্তীতে সড়কের বাকী অংশগুলোর নির্মাণ ও সম্প্রসারণের আওতায় আনা হবে।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।