৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহীন। লেখা পড়ার পাশাপাশি অটোভ্যান চালিয়ে রোজগারও করতে হয় তাকে। শুক্রবার অটোভ্যান নিয়ে রোজগারে বের হলে সাতক্ষীরার পাটকলঘাটায় ছিনতাইকারীদের হমলায় গুরুত আহত এ কিশোরের মাথায় অস্ত্রোপচার করার পর তাকে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসিইউ’তে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) রাখা হয়েছে। এদিকে শাহীনের দায়দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ তথ্য জানিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন। জানা যায়, যশোরের কেশবপুরের গোলাখালি মাদরাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শাহীন গেল শুক্রবার সকালে ব্যাটারিচালিত ভ্যান নিয়ে রোজগারে বের হয়েছিল। দুপুরে দুর্বৃত্তরা ভ্যানটি ভাড়া নেয়। পরে ধানদিয়া গ্রামের হামজাম তলা মাঠে ঢুকে একটি পাটক্ষেতের পাশে দুর্বৃত্তরা শাহীনের মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে সে। জ্ঞান ফিরে কাঁদতে থাকলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানায় খবর দেয়।
পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল হোসেন জানান, শাহীনকে উদ্ধার করে খুলনার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হলে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শাহীন যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে। প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘সমালোচনা করে, উহ-আহ দুঃখ প্রকাশ করে আপনারা তখন হয়তো ঘুমিয়ে আছেন। টিভিতে সংবাদ দেখেছেন, টকশো দেখেছেন কিংবা হিন্দি সিরিয়াল দেখে ক্লান্ত আপনি হয়তো ভালো মন্দ খেয়ে শান্তির ঘুম দিয়েছেন। সারাদিনের খাটাখাটুনি শেষে শাহীনের মা হাসপাতালের বারান্দায় গা এলিয়ে দিয়েছে। রাত আড়াইটায় যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজে গেলাম তখন জেগে আছে অগোছালো জামা কাপড় পড়া কিছু তরুণ। এরা সবাই ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মী। ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দেব নন্দী, দেবাশীষ আইচ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের জিএস মেহেদী হাসান শান্তসহ ২০ জন।
ছাত্রলীগকে যারা কথায় কথায় গালিগালাজ করে জাতে উঠার চেষ্টা করেন তারা একটু জেনে রাখেন, এই শাহীনকে যশোর থেকে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে ঢাকায় নিয়ে এসেছেন ছাত্রলীগেরই কর্মীরাই। কোনো জাতি উদ্ধারকারী সমালোচক এগিয়ে আসেনি। শাহীন কিন্তু ছাত্রলীগের কারও আত্মীয়ও নয়। ঢাকা মেডিকেলে আনার পর শাহীনের জন্য এবি পজেটিভ রক্ত জোগাড় করেছে এই জয়দেব নন্দীরাই। রাতে যখন সোয়া ১২টার সময় জয়দেব নন্দী আমাকে ফোন করে জানায়, তার অপারেশন করতে হবে এবং এরপর আইসিইউ লাগবে। সাথে সাথেই আমি, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার এস এম খুরশিদ আলম ও আওয়ামী লীগ সুভাস স্নিগ্ধ রায় মেডিকেল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে অপারেশন ও আইসিইউ’র ব্যবস্থা করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী তার বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াও তাদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখছিলেন।
অপারেশন শেষে রাত তিনটা থেকে শাহীনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, ৭২ ঘণ্টা না গেলে কিছু বলা যাবে না। অপারেশন চলার সময় যখন শাহীনের মা ও চাচার সাথে কথা বলি, ফেল ফেল চোখে তাকিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তারা শুধু একটি কথাই বলেছেন, আমরা আর নিজেদেরকে অসহায় মনে করছি না। আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। আর্থিক সহযোগিতাসহ সব রকমের সাপোর্টই দেয়া হয়েছে।’
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।