কোনো প্রকার প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই ধান কেনা কিভাবে শুরু করেছেন জানতে চাইলে সরাইল খাদ্য নিয়ন্ত্রক শামীম আহমেদ বলেন, "প্রচার করলে উপজেলার শত শত কৃষক ভীড় জমাবেন, এতো ধান কৃষকের কাছ থেকে কেনা সম্ভব নয়, তাই সমস্যা হবে ভেবে মাইকে প্রচার করানো হয়নি"। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে কৃষকদের না জানিয়ে লুকোচুরি করে বোরো ধান কেনার অভিযোগ উঠেছে খাদ্য অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে। গত ২৩ মে থেকে কোনো প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই অত্যন্ত গোপনে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। অভিযোগ উঠেছে, সরকারিভাবে ধান কেনার বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, কৃষক বা কৃষক সংগঠন এমনকি গণমাধ্যম কর্মীরাও জানতে পারেননি আনুষ্ঠানিকভাবে। তবে খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় ধান-চাল ব্যবসায়ীদের দহরমমহরম রয়েছে প্রতিনিয়ত। ফলে সরকারি এই কার্যক্রমের সুফল কারা পেতে যাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহাম্মদ মৃধা বলেন, “কৃষকদের নিকট থেকে ধান ক্রয় কর্মসূচিতে এতো লুকোচুরি কেন? প্রকাশ্যে মাইকিং করে প্রকৃত কৃষকদের নিকট থেকে ধান ক্রয় করা উচিত। অন্যথায় গ্রামীণ কৃষকদের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হবে”। উপজেলার অরুয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভূইঁয়া সাংবাদিকদের বলেন, “ সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম বিষয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে আমি নিজেই ভালোভাবে জানিনা, আমার এলাকার কৃষকেরা জানবেন কিভাবে। আর প্রচারণা তো দূরের কথা" শাহজাদাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, "ধান সংগ্রহ কার্যক্রম বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। আমার ইউনিয়নে কোনো প্রকার প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়নি। শুনেছি ইউনিয়নে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে কমিটির সদস্যরা কে কোথায় কি করছেন, এসবের কিছুই আমি জানিনা। এলাকার কৃষকেরা ধান বিক্রি করতে ঘুরে ফিরে পরিষদে আসছেন। কয়েকজন কৃষকের নাম দিতে চেয়েছিলাম; কিন্তু তারা এসব নাম এখনো নেয়নি।
নোয়াগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, "ধান সংগ্রহের ব্যাপারে আমার ইউনিয়নে কোনো প্রচার-প্রচারণা করা হয়নি। তবে প্রথমদিকে দু'একটি জায়গায় কৃষকের কাছ থেকে ধানের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, সেখানে তারা আমাকে উপস্থিত রেখেছিলেন। পরে কি হচ্ছে তা আমার জানা নেই। তবে অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা খাদ্য ক্রয় কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা শামীম আহমেদ মুঠোফোনে বলেন, “উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্তে শুধুমাত্র একজন কৃষকের নিকট থেকে এক মেট্রিক টন করে ধান ক্রয় করা হচ্ছে।তালিকা অনুযায়ী প্রকৃত কৃষকদের নিকট থেকে ধান কেনা হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে শামীম আহমেদ বলেন, “কৃষি বিভাগের তালিকা ও কমিটির সিদ্ধান্ত মেনেই টোকেনের মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ৪৫৪ টন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৭৫৬ টন ধান সংগ্রহের টার্গেট নিয়ে এ কার্যক্রম চলছে। সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে আগামি ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ নীতিমালায় যা-ই লিখা থাকুক না কেন ? নীতিমালাও অনুসরণ করতে হবে, উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্তও মানতে হবে। এছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। এদিকে সরাইল খাদ্য গুদাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোছাঃ হাফছা হাই বলেন, ২৭ জুন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রথমপর্যায় টার্গেটের ৪৫৪ টনের বিপরীতে ২৯৬ টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। তিনি বলেন, আমি কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষরিত টোকেন দেখে যাচাই-বাচাইয়ের পর ধান ক্রয় করি। প্রকৃত কৃষক কে তা যাচাই করবে কৃষি বিভাগ।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।